নীলাদ্রি এসি বাস ভ্রমণ | মাত্র ১ ঘন্টায় সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার গল্প | সিলেট - সুনামগঞ্জ এসি বাস | বাস জার্নি রিভিউ - ০৩

রিভিউ টপিক : আজকের ভ্রমণ গল্পতে আমি একটা সুন্দর বাস জার্নি সম্পর্কে কথা বলবো, আমি মুলত নীলাদ্রি এসি বাস ভ্রমণ করে মাত্র ১ ঘন্টায় সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার জার্নি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমার এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে এবং এইটা বাস জার্নি রিভিউ - ০৩

ছবি কারিগর -আজহারুল ইসলাম

রিভিউ ক্যাটাগরি : বাস ভ্রমণ
রিভিউ নাম্বার : ০৩
বাস কোম্পানীর নাম : নীলাদ্রি এসি বাস
বাসের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার : মনে নেই
রুট : সিলেট - সুনামগঞ্জ
ভ্রমণের তারিখ : ১৫ জানুয়ারি ২০২২

সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ বাস জার্নি রিভিউ - ০৩

আসসালামুয়ালাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় অনেক বেশি ভালো আছি, আজকে আপনাদের সাথে আমি আমার লাইফের সবচেয়ে সুন্দর ও ছোট এসি বাস জার্নি গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বাস জার্নি রিভিউ বা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - এই ভ্রমন অভিজ্ঞতাটা একটু বড় হতে পারে আশা করি আপনারা পুরো গল্পটা পড়বেন এবং আপনাদের অনেক ভালো লাগবে তাই পুরো ভ্রমণটি সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পুর্ন পড়তে ভুলবেন না কিন্তু। যাই হোক মুল রিভিউতে আসি। আমার নাম মোহাম্মদ আজহার, আমি সিলেটে থাকি আমার পরিবারের সাথে। কিন্তু আমার আব্বু ব্যাবসায়িক কাজে সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় থাকেন। আজকের রিভিউটিতে একটি ছোট এসি বাস জার্নি সম্পর্কে আপনাদের সাথে কথা বলবো। মুলত আমি এবং আমার বড় ভাইয়া মো: আজিজুল ইসলাম এর সাথে ওইদিন দুপুরবেলা বাস জার্নিটি করেছিলাম, কেনো জার্নিটা করেছিলাম তা নিয়ে এখন আপনাদের সাথে আমি কথা বলবো বা শেয়ার করবো।

কেনো বাস জার্নিটা করেছিলাম?

একটু আগেই বলছি, আমার আব্বু সুনামগঞ্জ এ থাকেন ব্যাবসায়িক কাজে। আমার মুল উদ্দেশ্য ছিলো একটা বাস ভ্রমন। কারন আমি হচ্ছি বাস লাভার। আর এক মাসের মধ্যে ৪/৫ টা বাস জার্নি না করলে আমার কেমন জানি লাগে। যাই হোক, যখন আব্বুর কাছ থেকে শুনতে পারলাম যে, সিলেট - সুনামগঞ্জ রুটে এসি বাস চালু করেছে নীলাদ্রি নামক একটা কোম্পানি। তা শোনার পর থেকেই অনেক ইচ্ছা জাগলো এই বাসে ভ্রমণ করার। আর পাশাপাশি আমার ইউটিউব চ্যানেল তথা Azhar Vai - Official এর জন্যেও বাস এর ভ্রমণ ভিডিও বানাতে পারবো। এইটা চিন্তা করে আমি এই বাস জার্নিটা করার জন্য প্রস্তুত হই। বলে রাখা ভালো। এই আর্টিকেলটা নিচ অংশে আপনারা আমার সেই সিলেট-সুনামগঞ্জ এসি বাস ভ্রমণের - ভ্রমন ভিডিওটার লিংক পেয়ে যাবেন। চাইলে দেখে আসতে পারেন। যাই হোক আমরা আমাদের মুল রিভিউতে আবারো ফিরে আসি। যেই প্লেন, সেই কাজ। আমি এবং আমার বড় ভাইয়া ঠিক করি যে, এই নীলাদ্রি কোম্পানির এসি বাসেই ভ্রমণ করবো এবং আব্বুর ওইখানে যেয়ে ১ দিন থাকবো।

কখন বাসে উঠলাম?

আমাদের প্লেন ছিলো সকালে নাস্তা করে সকালের ট্রিপের বাসে উঠবো এবং দুপুরে যেয়ে আব্বুর ওইখানে দুপুরের খাবার খাবো। হ্যা, প্লেন মতোই সব কিছু হলো - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - আমি এবং আমার বড় ভাইয়া, বাসায় নাস্তা করি এবং তারপর বাসা থেকে বের হই সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটের সময়। কারন সুনামগঞ্জ যাওয়ার বাস কিন্তু সিলেটের কদমতলী বাস টার্মিনালে পাওয়া যায় না। সুনামগঞ্জের বাস এর জন্য আরেকটা বাস টার্মিনালে যেতে, ওই বাস টার্মিনালটার নাম কুমারগাও বাস টার্মিনাল ( শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত)। আমার বাসা থেকে ওইখানে যেতে প্রায় ৪৫/৫০ মিনিট লেগে যায়। তাই, আমি এবং আমার বড় ভাইয়া একটু তাড়াতাড়ি বের হয়েছিলাম বাসা থেকে।


আমরা প্রথমে বাসা থেকে শাহপরান গেইটে যাই। তারপর শাহপরান গেইট থেকে টিলাগড় পয়েন্টে। ওইখানে যেয়ে রাস্তা পার হয়ে টিলাগড় পয়েন্ট থেকে আম্বরখানা যাই। আম্বরখানা থেকে ডাইরেক্ট বাস স্টান্ড এ যাই। আমাদের বাসা থেকে কুমারগাও বাস স্টান্ড এ যেতে প্রায় ৩ টা সিএনজি পালটানো লেগেছিলো আমাদের। তারপর আমরা নীলাদ্রি বাস কাউন্টারে যেয়ে জিজ্ঞাসা করি। উনারা বললেন প্রত্যেক ঘন্টায় উনাদের বাস একটা করে বাস ছেড়ে যায়। তাই আমার বড় ভাইয়া এর পরের ট্রিপের টিকেট কেটে ফেলেন। বলে রাখা ভালো আমরা A1-A2 সিট গুলো নিয়েছিলাম। তারপর ১১ টা ১০ মিনিটের সময় আমি এবং আমার বড় ভাইয়া বাসে উঠে বসে গেলাম এবং ভিডিও রেকর্ড করা শুরু করলাম। অনেক প্যাচাল পাড়লাম এখন আবারো আমি আমার রিভিউতে ফিরে আসি, এখন হয়তো সময়ের কিছুটা গরমিল হতে পারে। আপনারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেইখেন।

বাসে উঠে কি করলাম?

বাসে উঠে আমরা আমাদের সিটে যেয়ে বসে গেলাম, তারপর ঠিক সময়েই আমাদের বাস কুমারগাও বাস স্টান্ড থেকে আমাদের গন্তব্য তথা সুনামগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে রউনা করে। বাসের সামনে একটা লোহার মতো সুন্দর লাঠি ছিলো। আমি ওইটাতেই আমার ক্যামেরা স্টান্ড লাগিয়ে ফেলি এবং ভিডিও রেকর্ড করা শুরু করে ফেলি - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - আমরা একটু রাস্তা আসতেই দেখতে পাই সুনামগঞ্জ - ঢাকার এনা ট্রান্সপোর্ট এর একটা নন এসি কোচ বাস সিলেটে ঢুকতেছে। ওই বাসের ড্রাইভার হয়তো আমাকে দেখতে পেয়েছিলো। অনেক ডিপার দিয়েছিলো উনি। তারপর আমরা চলতে থাকি হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে।

রাস্তায় কি কি দেখলাম?

চলতে চলতে আমরা একটা ব্রিজ ক্রস করলাম, ব্রিজটার নাম হচ্ছে লামা কাজী ব্রিজ। সেই ব্রিজটার পাশেই একটা গ্রাম আছে, ওই গ্রামের মানুষরা মাছ শুকিয়ে শুটকি বানান। ওই এলাকার পাশে যাওয়ার সাথে সাথেই অনেক পঁচা গন্ধ নাকে লাগতেছিলো - তারপর আমাদের বাসের স্টাফ বাসের ভিতর হোম স্প্রে মারেন। এইভাবেই আমরা এগোতে থাকি। ২০ মিনিট পর আমরা একটা স্থানে এসে দেখতে পাই একটা বাস ও একটা লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। আমার ইউটিউব ভিডিওতে সেই ফুটেজটা আছে। এইটা দেখে অনেক কষ্ট লেগেছিলো আমার। এভাবেই চলতে চলতে আমরা একটা বাইপাসে আসি - ওই বাইপাসের ডান পাশ দিয়ে চলে গিয়েছিলো ছাতকের রাস্তা আর সোজা ছিলো সুনামগঞ্জ এর রাস্তা। আমরা বাইপাস ক্রস করি। এবং ক্রস করার সাথে সাথেই একটা রেল ক্রসিং ছিলো৷ ওইটা ক্রস করে আমরা একটা ছোট যানজটের মধ্যে আটকে যাই।


যানজত ছুটার পর, আমাদের বাস আবারো চলতে থাকে এবং চলতে চলতে আমরা একটা বাজারের পাশে চলে আসি। বাজারটার নাম খুবই অদ্ভুত ছিলো। নামটা হচ্ছে - জাউয়া। ওই বাজারে গরুর হাট বসেছিলো ওইদিন। তাই ওই বাজারেও কিছুক্ষন জ্যাম এর মধ্যে আটকে ছিলাম আমরা।যাই হোক, জ্যাম ছুটে গেলে আবারো আমরা সুনামগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে রউনা হই। তারপর একটা সুন্দর ব্রীজ দেখতে পাই৷ অনেক সুন্দর ছিলো ব্রিজটা। ব্রিজটার নাম কি তা আমি ভুলে গেছি, তাই আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তারপর আমরা সুনামগঞ্জ জেলার পাশাপাশি চলে আসি এবং সুনামগঞ্জের নতুন মেডিকেল কলেজ তথা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ পার হই। তারপর আমরা ধীরে ধীরে সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনালের পাশাপাশি চলে আসি। অত:পর আমাদের বাস সুনামগঞ্জ এর নীলাদ্রি বাস কাউন্টারের সামনে যেয়ে থেমে যায়।


সুনামগঞ্জ এসে পৌছানোর পর আমি ও আমার বড় ভাইয়া - ড্রাইভার ভাই, হেল্পার ভাইয়া এবং সুপারভাইজার ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে বাস থেকে নেমে সুনামগঞ্জে অবস্থিত নীলাদ্রি বাসের কাউন্টার এ যেয়ে বসি এবং আমার ক্যামেরা সেট-আপ রেডি করে কাউন্টারের সামনে এসে ভিডিও রেকর্ড করা শেষ করে ফেলি এবং তারই মধ্য দিয়ে আমাদের সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ বাস ভ্রমন দুপুর ১২ টা ৪০/৪৫ মিনিটের সময় শেষ হয়। যাই হোক এখন পুরো জার্নির ভালো দিক ও খারাপ দিক এবং কিছু জিনিসের উপর রেটিং দিয়ে আমার রিভিউটা শেষ করে ফেলি।

বাস জার্নির ভালো/খারাপ দিক ও সার্ভিস রেটিং :

বাস জার্নির ভালো দিক : নীলাদ্রি বাসে যতোবারই ভ্রমন করেছি, ততোবারই ভালো সার্ভিস পেয়েছি - আলহামদুলিল্লাহ। বাস স্টাফদের ব্যাবহার এবং সিলেট এর বাস কাউন্টার ম্যানেজার ভাইয়ের ব্যাবহার অনেক ভালো পেয়েছি। উনারা আমাকে আমার চ্যানেলের জন্য ভিডিও বানাতে অনেক বেশি সাহায্য করেছেন। বাসের প্রত্যেকটা যাত্রীর যেকোন প্রয়োজনে হেল্পার ভাইকে ডাকার সাথে সাথে যাত্রীরা কাছে পেয়েছিলো, যা যাত্রা পথে অনেক ভালো একটা দিক।
বাস জার্নির খারাপ দিক : বাসের ভাড়া বিবেচনা করে বাসের বাহ্যিক ও ভিতরের সিটিং পজিশন, সব কিছু মিলিয়ে আমার কাছে কোন খারাপ দিক চোখে পড়ে নাই। বলাই যায় বেস্ট সার্ভিস ছিলো। ( বি,দ্র, -> আমার ব্যাক্তিগত মতামত )
বাস জার্নির মোট সময় : আমাদের বাস সিলেটের কুমারগাও বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়েছিলো সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটে এবং আমি সুনামগঞ্জ নতুন বাস টার্মিনালে এসে পৌছাই প্রায় দুপুর ১২ টা ৩৫/৪০ মিনিট এর সময়। টোটাল ১ ঘন্টা ২০/২৫ মিনিটের মতো লেগেছিলো। রাস্তায় কোন জ্যাম ছিলো না সুতরাং বলাই যায়, আমরা সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ মাত্র ১ ঘন্টা ২০/৩৫ মিনিটে চলে আসি।
বাসের সার্ভিস রেটিং : বাসের ইন্টেরিয়র ও এক্সটেরিয়র সব কিছু বিবেচনা করে এবং স্টাফদের ব্যবহার এর উপর ভিত্তি করে আমি (০৯/১০) দিবো।
ড্রাইভার রেটিং : ড্রাইভার ভাই মোটামুটি বয়ষ্ক ছিলেন, উনি অনেক সুন্দর ভাবে বাস ড্রাইভ করেছিলেন এবং উনেক ফ্রেন্ডলি ছিলেন। আমাকে আমার চ্যানেলের ভিডিও বানানোর জন্য অনেক হেল্প করেছেন। উনার সাথে কথা বলে জানতে পারি - উনি প্রত্যেকদিন সর্বমোট প্রায় ৫/৬ বার এই বাস নিয়ে ট্রিপ দেন সিলেট-সুনামগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ-সিলেট ২ টা রুট মিলিয়ে। যাই হোক, উনার বাস ড্রাইভিং খুবই স্মুথ ছিলো, কোন রাফ ড্রাইভিং ছিলো না। তাই আমি উনার সব কিছুর উপর ভিত্তি করে উনার ড্রাইভিং কে (০৯/১০) দিবো।

পুরো ভ্রমণের ভিডিও লিংক কিভাবে দেখবেন?

আমার ইউটিউব চ্যানেলে অলরেডি ভিডিও আপ্লোড করা আছে, আপনারা যারা ভিডিওটি দেখতে চান ,তারা নিচের বাটনটি তে ক্লিক করুন।

ভিডিও দেখতে উপরে ক্লিক করুন

পুরো রিভিউটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, রিভিউটা কেমন লাগলো, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।

যেকোন প্রয়োজনে আমাকে মেইল করুন - ets2ridoy@gmail.com

Post a Comment

0 Comments