রিভিউ টপিক : আজকের ভ্রমণ গল্পতে আমি মুলত মিয়ামি এয়ারকোন বাস কোম্পানি এর হুন্দাই এসি বাস ভ্রমণ করে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জার্নি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমার এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে jounykothabd.com ওয়েবসাইটে এবং এইটা বাস জার্নি রিভিউ - ০৬
ছবি কারিগর - মোঃ রাজিবুল ইসলাম |
#একটি_বিশাল_জার্নি_রিভিউ
রাতে ঘুমানোর আগে শুয়ে শুয়ে একটি নিরামিষ যাত্রার রিভিউ পড়ে নিন। অনেকদিন রিভিউ লিখি না সময়ের অভাবে, আজ মনে হলো এটা শেয়ার করা উচিত আপনাদের সবার সাথে!
রিভিউ ক্যাটাগরি : বাস ভ্রমণ
রিভিউ নাম্বার : ০৬
বাস কোম্পানীর নাম : মিয়ামি এয়ারকোন হুন্দাই
বাসের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার : ঢাকা মেট্রো ব ১২-০৪৪৬
রুট : সিলেট - কক্সবাজার ( ভায়া মৌলভীবাজার - শ্রীমঙ্গল - কুমিল্লা - ব্রাহ্মণবাড়িয়া )
ভাড়া : কুমিল্লা নাগাদ (৯০০), চট্রগ্রাম (১৪০০) এবং কক্সবাজার (১৮০০) [ চট্রগ্রাম আর কক্সবাজারের টিকেটের প্যাসেঞ্জারদের জন্য তাদের কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে কুমিল্লা হোটেল ব্রেকে খাবার হিসেবে এক প্লেইট ফ্রি চিকেন খিচুড়ি এবং এক কাপ চা'এর ব্যাবস্থা রয়েছে, কুমিল্লার প্যাসেঞ্জারদের জন্য নয় ]
ড্রাইভার : শিমুল শিকদার ভাই
গাইড : ওসমান ভাই
আমার সাথে দুইজন ট্রাভেল-মেইট ছিলো : Ahmad Shafi Yeahia সাহেব আর আমার ছোট ভাই Nahiyan Alam
ভ্রমণের তারিখ : ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৩
সিলেট - চট্টগ্রাম বাস জার্নি রিভিউ - ০৬
পুরো রিভিউটা আমি তিন ভাগে ভাগ করছি!
প্রথম ভাগ : সিলেট - হবিগঞ্জ
আমাদের যাত্রা'খানা শুরু হয় সিলেট, কদমতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে রাত ৮.১৫'মিনিটে। বলা বাহুল্য, এই রুট'টি তাদের রিসেন্টলি ওপেন হওয়া একটি রুট এবং কদমতলী, বাস স্ট্যান্ডে তাদের মেইন কাউন্টারে কিছুটা ব্যাক-ওয়ার্ড লোকেশোনে একেবারে শেষ মাথায় সিলেট, রেলস্টেশনের প্রবেশের পথের উল্টোপাশে। এটা একটা নেতিবাচক দিক এদের নতুন শুরু করা ব্যানার হিসেবে। অবশ্য সিলেট মেইন টার্মিনালেও তাদের কাউন্টার রয়েছে কিন্তু কোথায় তা আমার নজরে আসে নি।
বাস ছাড়ে নির্ধারিত সময় থেকে ১৫'মিনিট বিলম্বে। সিট আমি পূর্বেই বুক করে রেখেছিলাম কারণ, উক্ত রুটে হুন্দাই দিয়ে ট্রিপ পরিচালনা করা ব্যানার আগে কেউই ছিলো না আর - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - যার ফল-স্বরুপ আমার মধ্যে এক্সাইটমেন্ট ছিলো বেশ! হুমায়ুন চত্বরে হয়ে আমরা {ঢাকা - সিলেট মহাসড়ক এন২'তে} প্রবেশ করি। প্রথম থেকে শিমুল ভাইয়ের অসাধারণ স্মুথ, স্কিলড ড্রাইভিং উপভোগ করছিলাম। আনলকড হুন্দাইয়ের গতি চোখের পলকেই মিটারে ১০০'ছুয়ে যাচ্ছিলো কিচ্ছুক্ষণ পরপরই! এই বাসটা এখনো পুরপুরি মিয়ামি কতৃপক্ষ ই-ক্লাস করে নি বলে সামনের দুই রো'এর সিট এখনো ১:২ বিজনেস ক্লাস হুন্দাইয়ের ফরমেশনে রয়ে গিয়েছে। এর ফল স্বরুপ, আমরা একই ভাড়া দিয়ে সামনে সিট নিয়ে বি-ক্লাস সিট পাই। যাক হউক, নিরিবিলি চলতে চলতে আমরা মৌলুভিবাজার - শ্রীমঙ্গল রুটে প্রবেশ করে টিলা এবং চা-বাগানের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা পথে এগুতে থাকি।
রাত ৯.২০'এ আমরা মৌলুভিবাজার বাস স্ট্যান্ডে প্রবেশ করি এবং সেখানে ১৫'মিনিট অপেক্ষা করে আবারও যাত্রা শুরু করি। এরই মাঝে সিলেট - বগুড়া - নওগা রুটের এস-আই'এর লং রুটের লিলেন্ড'কে আমরা স্মুথলি পাশ কাটিয়ে আসি। রাত ১০.৩০'নাগাদ শায়েস্তাগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে প্রবেশ করি। এখান থেকে আরও প্যাসেঞ্জার উঠে বাসে এবং বাসের ফাইনাল টোটাল বুকিং হয় ২৩'জন। এরপর ৪০'মিনিট পর প্যাসেঞ্জার'দের রিকুয়েষ্টে হবিগঞ্জ, জগদীশপুরে অবস্থিত হোটেল পানসি'তে যাত্রা বিরতি দেই ২০'মিনিটের জন্য। আমরা তিন'জন কেউই সেখানে তেমন কিছু খাই নি।
২য় ভাগ : হবিগঞ্জ - কুমিল্লা
হোটেল থেকে বের হই প্রায় ২৫'মিনিট বিরতি শেষে। বাসে উঠে খেয়াল করি যে স্টেয়ারিং'এ আরেকজন মুরুব্বি বসে আছেন। উনার নাম জানা হয় নি। শিমুল ভাইয়ের সিনিয়র একজন ড্রাইভার তাই শ্রদ্ধা করে একটু চালাতে দিয়েছেন নাকি। হোটেল থেকে বের হলাম এবার রাস্তায় চাপ একটু বেড়েছে। উনি ৬০-৭০'কি.মি গতি মেইন্টেন করে চালাচ্ছেন। যাক ভালো গতি নিয়ে আমার তেমন লাফানি নেই।
হবিগঞ্জ, মাধবপুরের আগ দিয়ে সামনে দিয়ে এক ট্রাক নরমাল ব্রেক ধরেছে সামনে দিয়ে কুকুর দৌড় দিয়েছে বলে উনি ঐ ট্রাকের পেছনে যেয়ে একেবারে চমৎকার হার্ড ব্রেক করেন এতোটাই ভয়াবহ ব্রেক যে গাইড সাহেব মাঝখান থেকে উড়ে যেয়ে সামনের গ্লাসের সাথে বাড়ি খায় - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - আমরা তিনজন'ও সামনে বসে বেশ উদ্ভট অনুভব করছিলাম কারণ সেখানে যথেষ্ট গ্যাপ ছিলো নরমালি স্লো করে আনার বাসটাকে এমন বাজে ভাবে ব্রেক না ধরে। যাই হউক, এরপর গাইড সাহেব পেছনে চলে যান শিমুল ভাইয়ের কাছে। সামনে শুধুমাত্র স্টাফ ছিলো। এভাবে চলতে চলতে বি.বাড়িয়া, সরাইল পার হবার সময় বিট মেরে দিয়ে এস-আই'এর উক্ত সিলেট - নওগা রুটের লিলেন্ড আমাদের ওভারটেক দিয়ে নাই হয়ে যায়। এখম রাস্তা পানির মতো ফাকা উনি ৬০-৬০'চালাচ্ছেন।
যাক এমন করতে করতে রাত ১২.৫০'নাগাদ আমরা বি.বাড়িয়ে বিশ্বরোড থেকে বামে বি.বাড়িয়া - কুমিল্লা, ময়নামতি রোডে প্রবেশ করি। পূর্বেই বলে রাখি, এইটুকু রাস্তা কোম্পানিগঞ্জ নাগাদ একেবারে ভয়াবহ খারাপ এখন। যদিও রাস্তার উন্নয়নের কাজ চলছে ফোর লেইন এবং বিভিন্ন স্থানে ওভারপাসের তবুও এই কাজ শেষ হতে অনেক সময় লাগবে তা ক্লিয়ার। এরই মধ্যে আমাদের ড্রাইভার সাহেব কয়েকবার বাম্পার রোডের সাথে ধাক্কা খাওয়া'য় । আর রাস্তার অবস্থার সাথে বাসটার কন্ডিশন খুব একটা ম্যাচ করছিলো না কোনোভাবেই কারণ একে তো রাস্তা খারাপ তার উপর, ড্রাইভার নাকি চোখে কম দেখেন শুধু ভাঙা মেরে দেন এরই সাথে কয়েকবার লুকিং গ্লাসেও লাগিয়ে দিয়েছেন।
কিচ্ছুক্ষণ পরপরই হুটহাট হার্ড ব্রেক, রাস্তা ফ্রি হলে ৪০-৫০'এ চালানো। এমনটাই চলছিলো। এরই মাঝে লোড লরি'ও আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো। সত্যি বলতে এই যাত্রার এই সময়ে নিয়তই করে নিয়েছিলাম যে, উনি'ই ড্রাইভ করতে থাকলে আমি কুমিল্লা যেয়ে ঢাকা ফিরে আসবো। ধৈর্য্যের চরম পরিক্ষা দিয়ে প্রায় রাত ৩'টা নাগাদ আমরা কুমিল্লা,ময়নামতি হয়ে এন১'এ প্রবেশ করি। কুমিল্লায় প্যাসেঞ্জার নামিয়ে দেখি বাস ইউ-টার্ন নিয়ে ঢাকা'মুখি মহাসড়ক ধরলো। প্রায় বেশ কিছু কিলোমিটার উল্টো পথ এসে আমরা এদের নিজেদের হোটেল মিয়ামি'তে প্রবেশ করি রাত ৩.১০" নাগাদ।
৩য় ভাগ :কুমিল্লা - চট্রগ্রাম
হোটেল বিরতি'তে খাওয়া দাওয়া শেষ করে এবার শিমুল ভাই দেখি আমার সাথে রসিকতা করছে যে কি ভাই কেমন চালাইসেন উনি? আমি তো ঘুমায়ে ছিলাম! আমরা তিনজন শুনেই আসলে বাকরুদ্ধ অনুভব করছিলাম! যাক গে, হোটেল থেকে ৩.৩৫'মিনিটে আমরা বের হই। এবার শিমুল ভাই'ই ড্রাইভিং সিটে রয়েছেন - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - বের হবার পর এন১'এ সেই রাতে অত্যাধিক বাস এবং ট্রাকের চাপ ছিলো তবুও টাইম যে পরিমাণ লস হয়েছিলো সবই কভার হয়ে গিয়েছে স্মুথলি। সামনে যে ব্যানারই পড়েছে সবাইকেই পাশ কাটিয়ে আমরা চট্রগ্রাম এসে জিইসি'এর মোড়ে যখন নামি তখন ঘড়িতে সময় ভোর ৫.২০'মিনিট। ডিটেইলস কাকে ওভারটেক দিলাম তা আর উল্লেখ করছি না।
তবে, এন১'এ আমরা উঠার পর টপ পেয়েছি ১৫৫'কি.মি।
এভারেজ পুরো পথ জুড়েই ১২০-১৩০'কি.মি মেইন্টেন করেছেন উনি গতি।
সবচাইতে ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে একবার'ও মনে হয় নি উনি রিস্কি ড্রাইভিং করছেন। হুন্দাইয়ের কারেন্ট এক্সেলারেশনের পারফেক্ট ইউটিলাইজন করেছেন উনি। সবকিছু মিলিয়ে এভাবেই সমাপ্তি হয় আরকি আমাদের একটি নিরামিষ যাত্রার!
সবশেষে এই নতুন চালু হওয়া ব্যানারটি নিয়ে কিছু কথা:
১. সিলেট, কদমতলী বাস স্ট্যান্ডে এদের শুরুর কাউন্টার'টা একটু প্রোপার লোকেশনে করলে প্যাসেঞ্জারদের খুজে পেতে সুবিধা হবে।
২. শ্রীমঙ্গল - মৌলুভিবাজার রুট ঘুরে যাওয়ার ফলে সিলেটের ডাইরেক্ট প্যাসেঞ্জারদের বেশ কিছুটা সময় এক্সট্রা খরচ হয়।
৩. হোটেল ব্রেকে তারা বাফেট খাবার দিবে বলে প্রচরণা চালানোর বিষয়টা এটা টোটালি একটা মিথ। এক প্লেট চিকেন খিচুড়ি এবং এক কাপ চা দিচ্ছে তারা। বলছি না বিষয়টা ভালো না অবশ্যই ভালো কিন্তু বাফেট দিবে বলাটা প্যাসেঞ্জারদের কিছুটা ঠকানো হচ্ছে তাই সত্য'টা বললাম!
৪. তাদের হুন্দাইগুলার ওভারঅল সাসপেনশন এবং ইঞ্জিন কন্ডিশনের দিকে আরও একটু নজর দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, সিল্কের বহর থেকে চলে আসার আগে অনেকদিন বাসগুলো পড়ে ছিলো গ্যারেজে।
পরিশেষে বলতে চাই, এদের কতৃপক্ষের বেশ ভালো পরিমাণ সাহস আছে আর না হলে কুমিল্লা-বি.বাড়িয়া সেকশনের উক্ত ভয়াবহ কন্ডিশনের রুটে কেউ হুন্দাই দিয়ে দেয় না! তাদের এই রুটের ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইলো! পোস্টের সাথে কিছু ছবি এবং ভিডিও এড করে দিলাম!
এই বাসের ইন্টেরিয়র। খুব সম্ভবত, শিগগিরই পুরো বাসটিকেই ই-ক্লাস করে ফেলবে এদের কতৃপক্ষ |
তাদের হোটেল ব্রেকে ফ্রি'তে চট্রগ্রাম এবং কক্সবাজারের প্যাসেঞ্জারদের প্রোভাইড করা চিকেন খিচুড়ি। আবারও উল্লেখ করছি সিলেট থেকে কুমিল্লা নাগাদ টিকেটে এইটা পাবেন না। |
[বি.দ্র- আমি নিতান্তই আমার নিজের মতামত দিয়েছে কেউ কোনো মন্তব্য আশা করছি ভুল বুঝবেন না।
এমন প্যারাগ্রাফের শেষ নাগাদ রিডিং পড়তে পারলে আমার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা নিবেন! বানানে কোথাও কোনো ভুল-ভ্রান্তি থাকলে কাইন্ডলি জানাবেন আমি এডিট করে নিবো]
পুরো রিভিউটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, রিভিউটা কেমন লাগলো, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
বাস যাত্রী / রিভিউ লেখকের নাম : Fardin Alam Turja , আমাকে ফলো করতে আমার নামের উপর ক্লিক করুন এবং ফেইসবুকে যেয়ে ফলো করে দিন।
রিভিউটি কালেক্ট করা হয়েছে : ফেইসবুক ভিত্তিক গ্রুপ Bus Lover থেকে।
যেকোন প্রয়োজনে আমাকে মেইল করুন - ets2ridoy@gmail.com
0 Comments