রিভিউ টপিক : আজকের ভ্রমণ গল্পতে আমি একটা সুন্দর বাস জার্নি সম্পর্কে কথা বলবো, আমি মুলত জৈন্তা এক্সপ্রেস এসি বাস ভ্রমণ করে সিলেট থেকে জাফলং মাত্র ১ ঘন্টায় যাওয়ার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমার এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে এবং এইটা লোকাল বাস জার্নি রিভিউ - ০১
ছবি কারিগর - আজহারুল ইসলাম |
রিভিউ ক্যাটাগরি : লোকাল বাস ভ্রমণ
রিভিউ নাম্বার : ০১
লোকাল বাস কোম্পানীর নাম : জৈন্তা এক্সপ্রেস
বাসের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার : সিলেট মেট্রো-ব ১১-০১৫৪
লোকাল বাসের রুট : সিলেট - জাফলং
ভ্রমণের তারিখ : ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
সিলেট থেকে জাফলং বাস জার্নি রিভিউ - ০১
আসসালামুয়ালাইকুম, আবারো ফিরে এলাম আরেকটা নতুন বাস জার্নি রিভিউ নিয়ে। আজকের বাস ভ্রমণটি করেছিলাম সিলেট থেকে জাফলং ট্যুরিস্ট স্পটের উদ্দেশ্যে। আমার ট্যুরমেট হিসেবে ছিলো জৈন্তা এক্সপ্রেস নামক একটি এসি বাস। বলে রাখা ভালো, এই বাস কোম্পানিটির মাত্র এই একটা বাসই আছে। এই ভ্রমনের ভিডিও অলরেডি আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করে রেখেছি, এই আর্টিকেলটার নিচ অংশে আমার ইউটিউব ভিডিওটির লিংক দেয়া থাকবে।আপনারা চাইলে দেখে আসতে পারেন। যাই হোক, রিভিউওটা একটু বড় হতে পাতে, আশা করি যারা পুরো আর্টিকেলটা পড়বেন তারা অনেক কিছু জানতে পারবেন।
আমাদের বাস ছাড়ার কথা ছিলো সিলেটের সোবহানীঘাট নামক বাস টার্মিনাল থেকে দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে। এইজন্যই আমি এবং আমার বড় ভাইয়া বাসা থেকে বের হই সকাল ১১ টা ০৫ মিনিটে। আমার বাসা শাহপরান গেইটে। এই বাসটি আমার বাসার সামনে দিয়েই প্রত্যেকদিন জাফলং যায়। কিন্তু আমি আপনাদেরকে একটা সুন্দর ভ্রমণ ভিডিও উপহার দেয়ার জন্য আমার বাসার সামনে থেকে এই বাসে না উঠে, এই বাস যেই বাস স্টান্ড থেকে ছাড়ে ওইখানে যেয়ে বাসে উঠেছিলাম।
আমার বাসা থেকে বের হয়ে বাস স্টান্ড টাতে যেয়ে পৌছাই। এবং আমার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য আমি ভিডিও শুট করা শুরু করে ফেলি - এই রিভিউওটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - ভিডিও রেকর্ড করতে করতে প্রায় সকাল ১১ টা ৫৫ মিনিট বেজে যায়। আমি বাসের ড্রাইভার সাহেবের পারমিশন নিয়ে বাসের ভিতরের ও কিছু ভিডিও রেকর্ড করে ফেলি। অতপর আমাদের বাস দুপুর ১২ টা ২০ এর সময় সোবহানী ঘাট বাস স্টান্ড ত্যাগ করে, এবং আমরা আমাদের গন্তব্য জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে রউনা হই।
বাসে উঠে কি কি করলাম ?
বাসে উঠার আগেও আমি কিছু ভিডিও রেকর্ড করে ফেলি আমার ইউটিউব চ্যানেলের ভ্রমন ভিডিও এর জন্য যা আপনাদেরকে একটু আগেই বলেছি । যাই হোক, আমি বাসে উঠে আমার সিটে বসে যাই এবং আমার ক্যামেরা কোথায় সেট-আপ করবো তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই। অত:পর আমার বড় ভাইয়া আমাকে বলে, হাতে নিয়েই রেকর্ড করতে। তাই বড় ভাইয়ার কথা মতো আমি ক্যামেরা সেট-আপ আমার হাতে নিয়েই ভিডিও রেকর্ড করা শুরু করে ফেলি। অনেক প্যাচাল পাড়লাম এখন আবারো আমি আমার রিভিউতে ফিরে আসি, এখন হয়তো সময়ের কিছুটা গরমিল হতে পারে। আপনারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেইখেন।
রাস্তায় কি কি হলো?
আমাদের বাস ও চলা শুরু করে ফেলে। আমাদের বাস ছাড়ার ৫ মিনিট পর আমরা অনেক বড় জ্যামে আটকে যাই নাইওরপুল পয়েন্টে এসে। এইখানেই প্রায় ১০ মিনিটের মতো আমরা বসে থাকি বাসে। তারপর জ্যাম ছুটে গেলে আমাদের বাস জাফলং এর উদ্দেশ্যে রউনা হয়। আমরা ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকি। আবারো শিবগঞ্জ পয়েন্টে এসে আমরা যানজটের মধ্যে আটকে যাই। তারপর যানজট শেষ হলে আবারো আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করি - এই রিভিউওটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - এরপর রাস্তা খালি থাকায় আমাদের বাস অনেক সুন্দর ভাবেই চলতে থাকে।
আমরা টিলাগড় এ অবস্থিত আমার কলেজে তথা এমসি কলেজ পার হয়ে চলে আসি। এভাবে চলতে চলতেই আমাদের বাস মেজরটিলা চলে আসে এবং আবারো আমরা ছোট একটা যানজটের শিকার হই। যানজট ছুটে গেলে আবারো আমাদের বাস চলতে শুরু করে এবং আমরা অনেক স্পীডেই চলতে চলতে আমার নিজের এলাকায় চলে আসি। শাহপরান গেইট ক্রস করে আমার বাসার সামনে দিয়ে বাস চলতে থাকে। এরপর আপনাদের আজহার ভাই তথা আমার বাসা ক্রস করে ফেলি আমরা।
আমার বাসা ক্রস করার পর আমাদের বাস অনেক স্পীডে চলতে শুরু করে, কারন এখন রাস্তা কিছুটা বড় ও অনেক সুন্দর। তারপর আমরা জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ বটেশ্বর ক্রস করি। আর অন্যদিকে আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও রেকর্ড করতে থাকি। কারন এই রাস্তাটা অনেক সুন্দর লাগে আমার কাছে। বাস চলতে চলতে আমরা হরিপুর বাজারে চলে আসি। বাজার ক্রস করার পর একটা ছোট ব্রিজ আছে, ওইটা ক্রস করি। ওই ব্রীজের নিচের পানিটা অনেক পরিষ্কার এবং পুরোপুরি নীল রংয়ের।
হরিপুর ক্রস করার পরই শুরু হয় আমাদের বাসে লোকাল প্যাসেঞ্জার তোলা। ভাই রে ভাই ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকার, সব রকমের প্যাসেঞ্জার বাসে তোলা শুরু হয়। আমি এবং আমার বড় ভাইয়ার সিট সামনে ছিলো। আমাদের সামনে ড্রাইভারের পিছনে একটা ছোট সিট ছিলো, ওইখানেই প্রায় ২/৩ জন মহিলা তুলে বসিয়েছিলো। যাই হোক এইরকম এসি বাস থেকে এই সার্ভিস কখনোই আশা করি নাই।
কিছু লোকাল প্যাসেঞ্জার দাড়িয়েও ছিলো বাসের মধ্যে। এইভাবেই আমরা জাফলংয়ের দিকে এগোতে থাকি। অত:পর আমি আর বাসের সামনের অংশ ভিডিও না করে, বাসের সাইডের গ্লাস থেকে ভিডিও রেকর্ড করতে থাকি। ডান পাশের গ্লাস থেকে ইন্ডিয়ার পাহাড় দেখা যাচ্ছিলো। তা রেকর্ড করি এবং নিজেও উপভোগ করতে থাকি।
এইভাবে চলতে চলতে প্রায় দুপুর ২ টা ০৫ মিনিটের সময় আমরা আমাদের গন্তব্য তথা জাফলং এ এসে পৌছাই। এবং বাসের ড্রাইভার সাহেব আমাদেরকে একেবারে ট্যুরিস্ট প্লেসে এসে নামিয়ে আবার বাস ঘুড়িয়ে চলে যান। আমি এবং আমার বড় ভাইয়া বাসের ড্রাইভার ভাই ও স্টাফদের থেকে বিদায় নিয়ে বাস থেকে নেমে যাই - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - যাই হোক এখন পুরো জার্নির ভালো দিক ও খারাপ দিক এবং কিছু জিনিসের উপর রেটিং দিয়ে আমার রিভিউটা শেষ করে ফেলি।
বাস জার্নির ভালো/খারাপ দিক ও সার্ভিস রেটিং :
বাস জার্নির ভালো দিক : এই বাস জার্নিটার ভালো দিক আমার কাছে দুইটা দিক লেগেছিলো। এক হচ্ছে বাসে এসি ছিলো, তাই অনেক ভালোভাবে জার্নিটা করতে পারছি। অপরদিকে দুই নাম্বার হচ্ছে বাসের ড্রাইভার এবং স্টাফের ব্যাবহার। উনারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন ভিডিও রেকর্ড করার সময়।
বাস জার্নির খারাপ দিক : এই বাসটা মুলত ট্রাকের চেসিস এর উপর বানানো, তাই বাসের লেগ স্পেস খুবই কম ছিলো। বাসের দৈর্ঘ্যের তুলনায় সিট ছিলো প্রচুর। যা আমার কাছে খারাপ লেগেছে। অন্যদিকে রাস্তা থেকে লোকাল যাত্রী তোলার দিকটাও খারাপ লেগেছিলো আমার কাছে। ( বলে রাখা ভালো, এই বাসটা কিন্তু গেইটলক সার্ভিস। মানে লোকাল প্যাসেঞ্জার তোলার অনুমতি নেই)
বাস জার্নির মোট সময় : আমি থাকি শাহপরান মাজারের পাশেই, সাধারণত আমার বাসা থেকে জাফলং যেতে মোট সময় লাগে ১ ঘন্টা ১০/১৫ মিনিটের মতো। ওইদিন যেহেতু আমি আমার বাসার সামনে থেকে বাসে না উঠে সোবহানীঘাট বাস টার্মিনাল থেকে বাসে উঠেছিলাম, সেহেতু আমাদের জাফলং যেতে সময় লেগেছিলো ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের মতো। রাস্তায় প্রচুর যানজট ছিলো, সোবহানীঘাট থেকে আমার বাসা পর্যন্ত আসতেই প্রায় ৩০/৪০ মিনিট লেগেছিলো। সুতরাং মোট বাস জার্নির সময় হচ্ছে ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট।
বাসের সার্ভিস রেটিং : বাসের সার্ভিস আহামরি কিছুই না, চলার মতো ছিলো। আমি মনে করেছিলাম ডাইরেক্ট জাফলং যাবে বাস কিন্তু তা না, হরিপুর নামক স্থান ক্রস করার পর বাসের স্টাফরা লোকাল প্যাসেঞ্জার তোলা শুরু করেছিলো ( ১০ টাকার ও)। এসি বাস হিসেবে এই জিনিসটা আমার কাছে ভালো লাগে নাই। তাই, আমি বাস সার্ভিসকে ০৭/১০ দিবো।
ড্রাইভার রেটিং : বাসের চ্যাসিসটি মুলত ট্রাক চেসিস, সেই অনুযায়ী ড্রাইভার অনেক ভালোই ড্রাইভ করেছে। উনার ড্রাইভিং এবং ব্যাবহারকে বিবেচনা করে আমি উনাকে ৮.৫/১০ দিবো।
পুরো ভ্রমণের ভিডিও লিংক কিভাবে দেখবেন?
আমার ইউটিউব চ্যানেলে অলরেডি ভিডিও আপ্লোড করা আছে, আপনারা যারা ভিডিওটি দেখতে চান ,তারা নিচের বাটনটি তে ক্লিক করুন।
ভিডিও দেখতে উপরে ক্লিক করুন |
পুরো রিভিউটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, রিভিউটা কেমন লাগলো, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
যেকোন প্রয়োজনে আমাকে মেইল করুন - ets2ridoy@gmail.com
0 Comments