রিভিউ টপিক : আজকের ভ্রমণ গল্পতে আমি আমার জীবনে ঘটে যাওয়ার একটা বাজে ও নেগেটিভ বাস জার্নি সম্পর্কে আপনাদের সাথে কথা বলবো, আমি মুলত হবিগঞ্জ-সিলেট এক্সপ্রেস বাস ভ্রমণ করে ২ ঘন্টায় সিলেট থেকে মৌলভীবাজার যাওয়ার জার্নি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমার এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd ওয়েবসাইটে এবং এইটা লোকাল বাস জার্নি রিভিউ - ০৩
ছবি কারিগর - রাজিবুল ইসলাম |
রিভিউ ক্যাটাগরি : লোকাল বাস ভ্রমণ
রিভিউ নাম্বার : ০৩
বাস কোম্পানীর নাম : হবিগঞ্জ সিলেট এক্সপ্রেস
বাসের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার : মনে নেই
রুট : সিলেট - মৌলভীবাজার
ভ্রমণের তারিখ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩
সিলেট থেকে মৌলভীবাজার জার্নি রিভিউ - ০৩
আসসালামুয়ালাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় অনেক বেশি ভালো আছি, আজকে আপনাদের সাথে আমি আমার লাইফের বাজে অভিজ্ঞতা সম্পুর্ন একটা বাস জার্নি অর্থাৎ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। এই ভ্রমন অভিজ্ঞতাটা একটু বড় হতে পারে আশা করি আপনারা পুরো গল্পটা পড়বেন এবং আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং আমার সাথে নেগেটিভ কি হয়েছিলো তা বুঝতে পারবেন, তাই পুরো ভ্রমণটি সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পুর্ন পড়তে ভুলবেন না কিন্তু।
যাই হোক মুল রিভিউতে আসি। আমার নাম মোহাম্মদ আজহার, আমি সিলেটে থাকি আমার পরিবারের সাথে। আজকের রিভিউটিতে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি নেগেটিভ বাস জার্নি সম্পর্কে আপনাদের সাথে কথা বলবো। মুলত আমি এবং আমার বড় ভাইয়া বাস জার্নিটি করেছিলাম। এবং ওই বাস জার্নিটার ভিডিও লিংক আপনারা আমার এই আর্টিকেলটার নিচে পেয়ে যাবেন, কারন ওইদিন আমি আমার ইউটিউব চ্যানেল তথা Azhar Vai - Official এর জন্য ভ্রমন ভিডিও তৈরী করেছিলাম। ওইদিন অনেক বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাকে এবং আমার বড় ভাইয়াকে বাঁচিয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ। যাই হোক কেনো ওই জার্নিটা করেছিলাম তা সম্পর্কে আমি এখন বলবো।
কেনো জার্নিটা করেছিলাম?
আমি একজন ট্রাভেল ভিডিও ক্রিয়েটর, ওইদিন জার্নিটা করার মুল উদ্দেশ্যই ছিলো আমার ইউটিউব এবং ফেইসবুক পেইজের জন্য ভিডিও রেকর্ড করার। পাশাপাশি আমার বড় ভাইয়ার একজন বন্ধুর বড় ভাইয়ের বিয়ে ছিলো মৌলভীবাজারে, উনি আমার বড় ভাইয়াকে এবং আমাকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। বলাই যায়, এক ঢিলে দুই পাখি মারাই আমাদের মুল উদ্দেশ্য ছিলো। যাই হোক, ওইদিন রাতে বিয়ে ছিলো। - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - তাই আমি এবং আমার বড় ভাইয়া চিন্তা করি ওইদিন দুপুরে বাসা থেকে বের হবো এবং মৌলভীবাজার পৌছানোর পর দুপুরের খাবার খাবো। তারপর ওই বিয়ের অনুষ্টানের স্থানে চলে যাবো। বিয়ে খাবো এবং পরের দিন সকালে সিলেটের উদ্দেশ্যে রউনা করে সিলেটে চলে আসবো।
যেই ভাবা সেই কাজ, আমরা সকালে নাস্তা করি। তারপর একদিন থাকার জন্য যা যা কাপড় এবং সরঞ্জাম প্রয়োজন তা ব্যাগে গুছিয়ে নেই। আমি আমার ক্যামেরা সেট-আপ করে ফেলি ভিডিও রেকর্ড করার জন্য। তারপর আমরা বাসা থেকে বের হই দুপুর ১২ টার আশেপাশে সময়ে। বাসা থেকে বের হয়ে শাহপরান গেইটে আসি, অত:পর একটা সিএনজি রিজার্ভ করে আমরা সিলেট বাস টার্মিনালে চলে আস।
আসার পর কিছু ভিডিও রেকর্ড করি এবং আমি বড় ভাইয়াকে বলি বাসের সামনে সিট নেয়ার জন্য। ভাইয়াও আমার কথা মতো বাসের সামনে সিট বুকিং করতে হবিগঞ্জ সিলেট এক্সপ্রেস বাসের টিকেট কাউন্টারে চলে যায়। তারপর থেকেই আমাদের সাথে বাজে ঘটনা ঘটা শুরু হয়৷ বাস কাউন্টারে বাসের হেল্পার ছিলো। ও আমাদেরকে বলে মৌলভীবাজারের জন্য সামনের সিট দেয়া যাবে না। সামনের সিট নিতে হলে সিলেট টু শ্রীমঙ্গল যাওয়ার ভাড়া দিতে হবে। তারপর আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে আমার বড় ভাইয়া শ্রীমঙ্গল এর জন্য ২ টি টিকেট কেটে ফেলে।
বাসে উঠে কি কি করলাম?
বাসে উঠার পর আমি আমার ভিডিও করতে থাকি, এবং বাসের সিটিং পজিশন গুলো আমি আমার ভিডিওতে দেখাতে থাকি। বলে রাখা ভালো, বাসে কেউ ছিলো না - পিছনে শুধুমাত্র ২জন ব্যাক্তি বসেছিলেন। আমি সিট দেখাতে দেখাতে ভিডিও করতেছিলাম। পিছনের ওই দুজনের মধ্যে একজন আমাকে বলতেছিলো ভিডিও না করার জন্য। পরে আমি বললাম কেনো করতে পারবো না? এইটা পাব্লিক প্লেস - কোন প্রাইভেট প্লেস না। আমার মনে হইছিলো ওই ছেলে দুজন কোন অবৈধ জিনিস নিয়ে মনে হয় বাসে উঠেছিলো।
যাই হোক, আমি এইটা বলার পর আর কিছু বলে নাই ওই ছেলে গুলো। তারপর আমি বাস থেকে নেমে বাসের সামনের কিছু ফুটেজ রেকর্ড করি এবং বাসের পাশের কিছু ভিডিও রেকর্ড করি। ভিডিও রেকর্ড করা দেখে বাসের হেল্পার আইসা আমাকে বলছিলো ভিডিও রেকর্ড না করতে - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - যাই হোক, তারপর উনাকে বললাম আমি জার্নিটাই করতেছি ইউটিউবের জন্য ভিডিও বানাবো বলে। উনি আরো তর্ক করে। এক পর্যায়ে আমার বড় ভাইয়ার যুক্তির কাছে হেল্পার হেড়ে যায় এবং চুপ হয়ে যায়। যাই হোক এভাবেই সব যাত্রী উঠে বাসে নিজের সিটে যেয়ে বসে গেলো। অত:পর আমাদের বাসে ড্রাইভার উঠে নিজের আসনে বসে গেলো।
বাস কখন ছাড়লো ?
ড্রাইভার সাহেব বাসে উঠলেন, তারপর আমাদের বাস চলা শুরু করলো। বাস টার্মিনাল থেকে পেসেঞ্জার নেয়া হলো। অত:পর হুমায়ুন চত্তর আইসা ১৫/২০ মিনিট বসে ছিলো স্টার্ট অফ করে। এবং হেল্পার নেমে পেসেঞ্জার তুলতে ছিলো এক এক করে। উঠতে উঠতে প্রায় ড্রাইভার এর চেয়ারেও পেসেঞ্জার বসে যাচ্ছে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাই রে ভাই, হেল্পার ভাই ঠিকই বলছিলো ভিডিও না করতে। কারন এতো বেশি পেসেঞ্জার বাসে তুলছিলো যে ভিডিও রেকর্ড করার জায়গা পাইতাছিলাম না।
এভাবে চলতে চলতে আমাদের বাস সিলেটের চন্ডিপুল নামক স্থান এ পৌছানোর কিছুটা আগে এসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হতে যাচ্ছিলো। মুলত একটা ট্রাক ছিলো সামনে আর আমাদের বাস ওভার স্পীডে ট্রাকটার ওভারটেক করার জন্য ডানে যায়। আর সাথে সাথে ট্রাক টা সিগনাল দেয় রাস্তা পার হওয়ার জন্য। লিখে আপনাদেরকে বোঝানো সম্ভব না। আপনারা নিচে আমার সেই ভ্রমনের ভিডিওটি পেয়ে যাবেন। দেখলে বুঝতে পারবেন। তারপর আমাদের বাস ড্রাইভার ট্রাক ড্রাইভারকে থামায়ে কিছু গালাগালি করা শুরু করেন।
অত:পর আমাদের আবারো যাত্রা শুরু হয়, মৌলভীবাজারের উদ্দেশ্যে। আমাদের বাসের ড্রাইভার অনেক ওভার স্পীডে বাস চালাচ্ছিলেন। একে তো পেসেঞ্জার নিতে নিতে পুরো বাসটাকে গরুবাহী ট্রাকের মতো রুপান্তর করে ফেলছিলেন। অন্যদিকে ওভার স্পীডিং। যাত্রীরা অনেকে উনাকে বলছিলো ধীরে সুস্থে চালানোর জন্য। কিন্তু উনি কার কথাই গায়ে লাগাননি। ওইভাবেই স্পীডে ড্রাইভ করতেছিলেন। এভাবে চলতে চলতে আমরা অনেক গুলো ট্রাক এবং বাসের ওভারটেক করি - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - তারপর আমরা শেরপুর টোল প্লাজায় চলে আসি এবং টোল দিয়ে শেরপর ব্রিজ ক্রস করি। শেরপুর ব্রিজ ক্রস করার পর শেরপুর চত্তরে এসে লোকাল পেসেঞ্জার দেরকে নামায়।
নামানো শেষ হওয়ার পর মৌলভীবাজার রোডে এসে আবারো পুরো বাস ভরে পেসেঞ্জার নেয়া শুরু করে। আর অন্যদিকে আমি আমার ভিডিও রেকর্ড করতে থাকি। এইরকম ভাবে চলতে চলতে দুপুর ৩ টা ৫৫ বা ৪ টার দিকে আমরা মৌলভীবাজার বাস টার্মিনালে এসে নেমে যাই এবং আমাদের বাস আমাদের রেখে হবিগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে চলে যায়। আমি এবং আমার বড় ভাইয়া মৌলভীবাজার নেমে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। অত:পর ভাইয়ার বন্ধু এসে আমাদেরকে নিয়ে উনার বাসায় চলে যান। যাই হোক এখন পুরো জার্নির ভালো দিক ও খারাপ দিক এবং কিছু জিনিসের উপর রেটিং দিয়ে আমার রিভিউটা শেষ করে ফেলি।
বাস জার্নির ভালো/খারাপ দিক ও সার্ভিস রেটিং :
বাস জার্নির ভালো দিক : এই ভ্রমন অভিজ্ঞতাতে আমি শুধু বাসের কাউন্টার ম্যানেজার এর থেকেই ভালো ব্যাবহার পেয়েছি। এটাই আমার কাছে ভালো দিক লেগেছিলো। বাকি সব কিছু মোটামুটি এবং বাসের হেল্পারের ব্যবহার জঘন্য লেভেলের ছিলো।
বাস জার্নির খারাপ দিক : এই জার্নিটাতে অনেক কিছুই খারাপ পেয়েছিলাম, এক এক করে সব বলি। আমার এই জার্নিটা করার মুল উদ্দেশ্যই ছিলো ইউটিউব ভিডিও রেকর্ড করবো এবং একটা বড় ভাইয়ের বিয়ে খেয়ে আবার পরের দিন সিলেট চলে আসবো। - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - আমি বাসে উঠে ভিডিও রেকর্ড করার সময় বাসের পিছনে ২ জন বসে ছিলো। ওরা প্রথমেই আমাকে বলতেছিলো যে ভিডিও না করার জন্য। পরে বললাম কেন করবো না? এইটাতো পাব্লিক প্লেস। পাব্লিক প্লেসে আমার যা ইচ্ছা করবো। যাই হোক ওই ২ ব্যাক্তি ইগনোর করলাম ঠিক ই কিন্তু বাসের হেল্পার আইসা যে একটা ভাব নিয়ে বললো ভিডিও করা যাবে না। বাজে ব্যভার করছে আমার সাথে। যাই হোক ওইদিন এর ভ্রমন ভিডিওটার লিংক আপনারা এই আর্টিকেলটার নিচেই পেয়ে যাবেন। আমি হেল্পারের কথা ইগ্নোর করে ভিডিও রেকর্ড করি। বাস ছাড়ার পরই আমরা একটা বড় ধরনের এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে বাঁচি। আলহামদুলিল্লাহ। ড্রাইভার অনেক রাফ ড্রাইভ করেছিলেন। বাসের সিট ও তেমন সুবিধার ছিলো না। আর রাস্তার যেখান থেকে মানুষ পেয়েছে, সেখানেই বাস থামিয়েই পেসেঞ্জার নিয়েছে। আমার ভিডিওতে প্রমান আছে। স্টাফ এবং অন্যান্য কিছু জিনিস বিবেচনা করলেই। এইগুলোই আমার কাছে খারাপ দিক লেগেছিলো। ( বি,দ্র, -> আমার ব্যাক্তিগত মতামত )
বাস জার্নির মোট সময় : আমাদের বাস সিলেটের পুরাতন বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়েছিলো দুপুর ২ টা ১৫ মিনিটে এবং আমি মৌলভীবাজার বাস টার্মিনালে এসে পৌছাই প্রায় দুপুর ৩ টা ৫৫ মিনিট এর সময়। টোটাল ২ ঘন্টার মতো লেগেছিলো। রাস্তায় অনেক গাড়ির চাপ ছিলো না। জ্যামে ছিলাম প্রায় ১০/১৫ মিনিটের মতো। সুতরাং বলাই যায় বাস রানিং এ ছিলো ২ ঘন্টা ০০ মিনিট এবং আমরা সিলেট থেকে মৌলভীবাজার মাত্র ২ ঘন্টায় চলে আসি।
বাসের সার্ভিস রেটিং : বাসের ইন্টেরিয়র ও এক্সটেরিয়র সব কিছু ভালো ছিলো, বাসের ড্রাইভারের ব্যবহার ও ভালো ছিলো কিন্তু হেল্পার যিনি ছিলেন, উনি আমাকে বাস ছাড়ার আগেই বলে দিছেন ভিডিও রেকর্ড না করতে। ভাই রে ভাই, উনি বলবে আর আমি থাইমা থাকবো? তা হবে না তা হবে না। আমি আমার ভিডিও রেকর্ড করতেই থাকি। যাই হোক সব কিছু বিবেচনা করে এবং স্টাফদের ব্যবহার এর উপর ভিত্তি করে আমি (০৬/১০) দিবো।
ড্রাইভার রেটিং : ড্রাইভার মোটামুটি বয়ষ্ক ছিলেন, কিন্তু একটা দিকই আমার কাছে খারাপ লেগেছিলো তা হচ্ছে রাস্তায় এতো গাড়ির চাপ থাকার পরও উনি অনেক বেশি স্পীডে বাস ড্রাইভ করেছিলেন, আল্লাহ না করুক যদি কোন দুর্ঘটনার শিকার হতাম তাহলে বাসের সামনের অর্ধেক অংশ নাই হয়ে যেতো ( এতো বেশি স্পীডে ছিলেন উনি )। আমি স্পীড লাভার না আর যদি রাস্তাতে এতো গাড়ির চাপ না থাকতো তাহলে স্পীড নিয়ে কিছুই বলতাম না। বাস ছাড়ার পর পরই চন্ডিপুলে যাওয়ার আগে উনি একবার এক্সিডেন্ট করতে গিয়েছিলেন - আল্লাহর রহমতে কিছু হয় নাই । তাই, আমি উনার ড্রাইভিং কে (০৭/১০) দিবো।
পুরো ভ্রমণের ভিডিও লিংক কিভাবে দেখবেন?
আমার ইউটিউব চ্যানেলে অলরেডি ভিডিও আপ্লোড করা আছে, আপনারা যারা ভিডিওটি দেখতে চান ,তারা নিচের বাটনটি তে ক্লিক করুন।
ভিডিও দেখতে উপরে ক্লিক করুন |
পুরো রিভিউটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, রিভিউটা কেমন লাগলো, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
যেকোন প্রয়োজনে আমাকে মেইল করুন - ets2ridoy@gmail.com
0 Comments