মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেন ভ্রমণ | মাত্র দেড় ঘন্টায় লোকাল ট্রেনে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী যাওয়ার ছোট অভিজ্ঞতা | লোকাল ট্রেন জার্নি রিভিউ - ০১

রিভিউ টপিক : আজকের ভ্রমণ গল্পতে আমি একটা সুন্দর এবং ছোট ট্রেন জার্নি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো , আমি মুলত মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেনে ভ্রমণ করে মাত্র দেড় ঘন্টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী যাওয়ার ছোট অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমার এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে এবং এইটা লোকাল ট্রেন জার্নি রিভিউ - ০১

ছবি কারিগর - আর এফ সিফাত হোসেইন

রিভিউ ক্যাটাগরি : লোকাল ট্রেন ভ্রমণ
রিভিউ নাম্বার : ০১
লোকাল ট্রেন কোম্পানির নাম : মহানন্দা এক্সপ্রেস
লোকাল ট্রেনের লোকো নাম্বার : জানি না
লোকাল ট্রেনের রুট : চাঁপাইনবাবগঞ্জ - খুলনা কিন্তু আমি ভ্রমণ করেছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ - রাজশাহী
ভ্রমণের তারিখ : ০৯ জুন ২০১৯

চাঁপাইনবাবগঞ্জ - রাজশাহী  ট্রেন জার্নি রিভিউ - ০১

আসসালামুয়ালাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় অনেক বেশি ভালো আছি, আজকে আপনাদের সাথে আমি আমার লাইফের সবচেয়ে ছোট ট্রেন জার্নি গুলোর মধ্যে একটি লোকাল ট্রেন জার্নি বা ট্রেন ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। এই ভ্রমন অভিজ্ঞতাটা একটু বড় হতে পারে আশা করি আপনারা পুরো গল্পটা পড়বেন এবং আপনাদের অনেক ভালো লাগবে, তাই পুরো ভ্রমণটি সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পুর্ন পড়তে ভুলবেন না কিন্তু। যাই হোক মুল রিভিউতে আসি। আমার নাম মোহাম্মদ আজহার, আমি সিলেটে থাকি আমার পরিবারের সাথে। কিন্তু আজকের ট্রেন জার্নিটি আমি করেছিলাম রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমনুরা উপজেলার আমনুরা রেলস্টেশন থেকে। 


আজকের রিভিউটিতে আমি আমার journekothabd.com ওয়েবসাইটের প্রথম লোকাল ট্রেন জার্নি রিভিউ সম্পর্কে আপনাদের সাথে কথা বলবো। মুলত আমি ও আমার চাচাতো ভাই-বোন এবং চাচিদের সাথে ওইদিন এই ছোট ট্রেন জার্নিটি করেছিলাম। বলে রাখা ভালো, আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো রাজশাহীতে যেয়ে কিছু ট্যুরিস্ট প্লেস ঘুরে দেখা। ভালো ট্রেন আমনুরা থেকে সকালবেলা পাওয়া যায় না তাই এই লোকাল ট্রেনে করে ভ্রমণটা করেছিলাম।

কেনো ট্রেন জার্নিটি করেছিলাম?

আমি এবং আমার আব্বু সিলেট থেকে দাদা বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম, মোট চার দিন আমনুরাতে থেকে ছিলাম, আমার কাছে শহরের থেকেও বেশি গ্রাম অনেক ভালো লাগে। দাদা বাড়ি যাওয়ার পর আমি এবং আমার ফুফাতো ভাই আশিক ( ও আর আমি বেস্ট ফ্রেন্ড) আমরা প্লেন করি এইবার অনেক ঘুরাঘুরি করবো পুরো রাজশাহীতে। যেই ভাবা, সেই কাজ আমি আব্বুকে বলি - আব্বুও আমাকে পারমিশন এবং টাকা দুটোই দিয়ে দেন ঘুরাঘুরি করার জন্য। আমাদের প্লেন ছিলো শুধুমাত্র আমি এবং আশিক, আমরা ২ জন ঘুরতে বের হবো এবং ঘুরবো। কিন্তু কখনোই প্লেন মতো কিছু হয় না - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের সাথে আমার চাচি-ফুফাতো বোন-চাচাতো ভাই/বোন সবাই যাওয়ার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে। 


আব্বুও আমাদেরকে পারমিশন দেন, এই কারনেই পারমিশন পাওয়ার পর দিন সকালে আমরা রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রউনা হওয়ার কথা ঠিক করি। ওইদিন অনেক গরম ছিলো এবং আমাদের প্লেন ছিলো আমরা রাজশাহীতে যেয়ে সকালের নাস্তা করবো। নাস্তা শেষ করার পর রাজশাহীর কিছু ট্যুরিস্ট প্লেস আছে, যেমন পদ্মাপাড়, আই বাদ, টি বাদ, জিয়া পার্ক, এইগুলো এক্সপ্লোর করবো। সুতরাং বলাই যায় আমরা শুধুমাত্র ঘুরাঘুরি করার জন্যই ওইদিন ট্রেন ভ্রমণটি করেছিলাম।

ট্রেন কখন ছেড়ে ছিলো?

আমাদের ট্রেনটি মুলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে খুলনা যায় ( যতোটুকু আমি গুগল মামা থেকে জানতে পেরেছি আর কি)। আমরা ট্রেনে উঠতে চেয়েছিলাম আমার দাদার বাড়ির পাশের রেলস্টেশন থেকে তথা আমনুরা রেলস্টেশন থেকে। যেই ভাবা সেই কাজ আমরা ওইখান থেকেই টিকেট কেটে রেখে দেই।


আমাদের ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সকাল ৬ টার দিকে ছেড়ে আসে। আমরা সকাল ৫টা ৫৫ এর সময়ই আমাদের দাদা বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। (বলে রাখা ভালো - সময়ের একটু আরেকটু ভুল হতে পারে, সবাই দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেইখেন এবং সময় নিয়ে চিন্তা না করে আমার রিভিউটা পড়ুন, আশা করি অনেক ভালো লাগবে আপনাদের) - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - আমরা ৬ টা ১৫ মিনিটের সময়ই আমনুরা রেলস্টেশনে পৌছাই, এবং হালকা পাতলা কিছু নাস্তা কিনে নেই ( সিংগাড়া, মোগলাই আর জুস)।  তারপর স্টেশনে বসে অপেক্ষা করতে থাকি আমাদের ট্যুরমেট মহানন্দা এক্সপ্রেসের জন্য। অত:পর আমাদের ট্রেন আসে আমনুরা রেলস্টেশনে। এবং আমি ট্রেন দেখেই অবাক হয়ে যাই। ভাই রে ভাই, ট্রেনের অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ এবং অনেক পুরাতন। 


তারপর আমরা ট্রেনে উঠে দেখি এই সাতসকালেও ট্রেনে মানুষের অভাব নাই। পুরো ট্রেন দেখে মুরগীর খামার মনে হয়েছিলো। আমি আমার জীবনে প্রথম ও শেষবারের মতোই এমন ট্রেনে ভ্রমণ করেছিলাম। ট্রেনের বসারতো জায়গা ছিলোই না - সাথে দাঁড়ানোর ও জায়গা ছিলো। অনেক চাপাচাপি করে ট্রেনে আমার চাচি-বোনদের সিট নিয়ে বসাই এবং আমি, আমার ফুফাতো ভাই ও চাচাতো ভাই দাঁড়ায় ছিলাম পুরো ট্রেন জার্নিতে। অত:পর আমাদের ট্রেন আমনুরা রেলস্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। আমি ট্রেনের বগির দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।  আহা গ্রামীন প্রাকৃতিক পরিবেশ - কতো মনোমুগ্ধকর। আমার অনেক ভালো লাগে এইসব গ্রামীণ দৃশ্য। যাই হোক আমাদের ট্রেন রাজশাহীর অভিমুখে চলতেছে চলতেছে চলতেছ...... 


এখন কিছু মজার কাহিনীতে আসি, এই মানুষের ভিড়েও ট্রেনে হিজরাদের থেকে মুক্তি পাই নাই। আমরা তিন ভাইয়ের থেকে ৩০ টাকা নিয়ে যায়। এবং কয়েকজন টাকা দিতে মানা করলে তাদের মান সম্মান নিয়ে খেলা শুরু করে দেয় হিজরারা। হিজরাদের একটা ভালো দিক খেয়াল করলাম। উনারা ছেলে-পুরুষদের থেকে টাকা নেয় কিন্তু মহিলা বা বয়ষ্ক বৃদ্ধ ব্যাক্তিদের থেকে কখনো টাকা খুজেই না। এভাবেই চলতেছিলো আমাদের লোকাল ট্রেনের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। ধাক্কাধাক্কি করতে করতে অত:পর আমরা আমাদের গন্তব্য তথা রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের পাশাপাশি চলে আসি। 


রাজশাহী শহরে ঢুকার সাথে সাথেই আমার ভালো লাগতে শুরু করে, আহা!! কতো সুন্দর, পরিষ্কার একটা শহর আমাদের। বাংলাদেশের মধ্যেই এই একটা শহর যেটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে। রাজশাহী শহর দেখতে দেখতেই আমরা রাজশাহী রেলস্টেশনে এসে পৌছাই এবং ট্রেন থেকে ধাক্কাধাক্কি করে নামতে সক্ষম হই। আমরা প্রায় সকাল ৮ টার আশেপাশে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌছাই। ট্রেন স্টেশন থেকে বের হয়েই আমরা হোটেলে ঢুকে সকালের নাস্তা শেষ করি এবং আমাদের পরবর্তী প্লেন অনুযায়ী ট্যুরিস্ট প্লেস গুলো ঘুরতে শুরু করে ফেলি - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - যাই হোক এখন পুরো জার্নির ভালো দিক ও খারাপ দিক এবং কিছু জিনিসের উপর রেটিং দিয়ে আমার রিভিউটা শেষ করে ফেলি।

ট্রেন জার্নির ভালো/খারাপ দিক ও সার্ভিস রেটিং :

ট্রেন জার্নির ভালো দিক : ট্রেন জার্নির ভালো দিক বলতে আমার কাছে অনেক দিকই ভালো মনে হয়, যেমন বাসে করে ভ্রমণ করলে রাস্তায় যানজটে আটকাতে হয় এবং হটাত বাস ড্রাইভার ব্রেক করলে সিট একটা ঝাকিয়ে উঠে, এইসব সমস্যা ট্রেনে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ট্রেনে ওয়াশরুম এর ব্যাবস্থাও থাকে আরো খাবার - দাবারের ও আলাদা ব্যাবস্থা থাকে। এই জিনিস গুলো বাসের তুলনায় ট্রেনের ক্ষেত্রে আমার কাছে অনেক ভালো লাগে।
ট্রেন জার্নির খারাপ দিক : ট্রেন জার্নির সবচেয়ে খারাপ দিক হলো ট্রেনের শব্দ, এবং টিকেট কেটেও সিট না পাওয়া, সেদিন ট্রেনে উঠেই আমি আহাম্মক বনে গিয়েছিলাম, ভাই রে ভাই পুরো মাথা হ্যাং হয়ে যায় এই দেখে যে, ট্রেনের মধ্যে বসার জায়গাতো নাই-ই সাথে দাড়ানোর ও জায়গা ছিলো না। আরেকটা খারাপ দিক হচ্ছে হিজরাদের ধারা ট্রেন যাত্রীদের মানহানীর ব্যাপারটা। আমার চোখে ট্রেন জার্নির আর কোন খারাপ দিক আছে বলে মনে হয় না। কারন এইটা লোকাল একটা বগি ছিলো ট্রেনের - এর থেকে আর ভালো কিছু আশাও করা উচিত না ( আমার নিজের ব্যাক্তিগত মতামত, আপনাদের সাথে নাও মিলতে পারে )
ট্রেন জার্নির মোট সময় : আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো আমনুরা রেলস্টেশন থেকে সকাল ৬ টা ২৫/৩০ মিনিটে, এবং আমরা রাজশাহী রেলস্টেশনে যেয়ে পৌছাই সকাল ৭টা ৫০ বা ৮ টার দিকে ( ঠিক সময়টা মনে নাই আপাতত, ৪ বছর হয়ে গেছেতো তাই)। সুতরাং বলাই যায় আমরা প্রায় ১ ঘন্টা ৩০/৪০ মিনিট জার্নি করেছিলাম।
ট্রেনের সার্ভিস রেটিং : ট্রেনের সার্ভিস আমার কাছে সব সময়ই ভালো লাগে, কিন্তু লোকাল ট্রেনে উঠে ভালো সার্ভিস আশা করা মোটেও উচিত না, তাই ট্রেনের বাহ্যিক ও ভিতরের সব কিছু মিলিয়ে আমি ট্রেনের সার্ভিসকে ০৫/১০ দিবো।
ট্রেন জার্নির সতর্কতা : নিজ নিজ জিনিস পত্র নিজ নিজ দায়ীত্বে রাখবেন এবং হিজরা দেখলেই তর্কাতর্কি না করে ১০ টাকা দিয়ে বিদায় জানাবেন অন্যথায় আপনার মান সম্মান ধুয়ে দিতে ওদের ১০ মিনিটও লাগবে না।
ট্রেন কর্তৃপক্ষের প্রতি উপদেশ : লোকাল ট্রেন গুলোরও যত্ন নেয়া প্রয়োজন, ট্রেনের অবস্থা প্রচুর খারাপ ছিলো, টিকেট কেটেও বসার জায়গা পাই নি, তাই প্রায় ৪৯ কিলোমিটার জায়গা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে হয়েছিলো। তাই এইদিকে খেয়ার রাখার আহবান জানাচ্ছি তাহলে বেশি ভালো হয় প্রত্যেকটা যাত্রীদের জন্য। আশা করি আপনারা ব্যাবস্থা নিবেন - অগ্রীম ধন্যবাদ।


পুরো রিভিউটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, রিভিউটা কেমন লাগলো, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।


যেকোন প্রয়োজনে আমাকে মেইল করুন - ets2ridoy@gmail.com

Post a Comment

0 Comments