পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন ভ্রমণ | মাত্র ১ ঘন্টায় ট্রেনে করে সিলেট থেকে কুলাউড়া যাওয়ার ছোট অভিজ্ঞতা | ট্রেন জার্নি রিভিউ - ০১

রিভিউ টপিক : আজকের ভ্রমণ গল্পতে আমি একটা সুন্দর এবং ছোট ট্রেন জার্নি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, আমি মুলত পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনে ভ্রমণ করে মাত্র ১ ঘন্টায় সিলেট থেকে কুলাউড়া যাওয়ার জার্নি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমার এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে এবং এইটা ট্রেন জার্নি রিভিউ - ০১

ছবি কারিগর - আর এফ সিফাত হোসেইন

রিভিউ ক্যাটাগরি : ট্রেন ভ্রমণ
রিভিউ নাম্বার : ০১
ট্রেন কোম্পানির নাম : পাহাড়িকা এক্সপ্রেস
ট্রেনের লোকো নাম্বার : জানি না
রুট : সিলেট - চট্টগ্রাম কিন্তু আমি ভ্রমণ করেছিলাম সিলেট - কুলাউড়া
ভ্রমণের তারিখ : ১৪ নভেম্বর ২০২২

সিলেট থেকে কুলাউড়া ট্রেন জার্নি রিভিউ - ০১

আসসালামুয়ালাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় অনেক বেশি ভালো আছি, আজকে আপনাদের সাথে আমি আমার লাইফের সবচেয়ে ছোট ট্রেন জার্নি বা ট্রেন ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। এই ভ্রমন অভিজ্ঞতাটা একটু বড় হতে পারে আশা করি আপনারা পুরো গল্পটা পড়বেন এবং আপনাদের অনেক ভালো লাগবে, তাই পুরো ভ্রমণটি সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পুর্ন পড়তে ভুলবেন না কিন্তু।


যাই হোক মুল রিভিউতে আসি। আমার নাম মোহাম্মদ আজহার, আমি সিলেটে থাকি আমার পরিবারের সাথে। আজকের রিভিউটিতে আমি আমার journeykothabd.com
 ওয়েবসাইটের প্রথম ট্রেন জার্নি রিভিউ সম্পর্কে আপনাদের সাথে কথা বলবো। মুলত আমি এবং আমার বড় ভাইয়া মো: আজিজুল ইসলামের সাথে ওইদিন এই ছোট ট্রেন জার্নিটি করেছিলাম।

কেনো ট্রেন জার্নিটি করেছিলাম?

এই ট্রেন জার্নিটি করার মুল কারন হচ্ছে আমার বড় ভাইয়া। কারন আমার বড় ভাইয়া একজন গ্রাফিক্স ডিজাইন ট্রেইনার অর্থাৎ আমার ভাইয়া গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স এর উপর শিক্ষকতা করেন। বড় ভাইয়া যেই ইন্সটিটিউটে ট্রেইনার বা শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন, ওই ইন্সটিটিউট-টা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত। এই রিভিউওটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে। বলে রাখা ভালো, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি কুলাউড়া রেল স্টেশনের একেবারে পাশেই অবস্থিত। অনেক প্যাচাল পারলাম এখন মুল রিভিউতে ফিরে আসি, এইজন্যই ভাইয়ার অনুরোধে ভাইয়ার সাথে এই ট্রেন জার্নিটি করেছিলাম সিলেট থেকে কুলাউড়ার উদ্দেশ্যে।

ট্রেন কখন ছাড়লো ?

আমাদের ট্রেন ছিলো সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে সিলেট রেল স্টেশন থেকে। আমি ওইদিন সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যাই ( আনুমানিক সকাল ৭ টার দিকে)। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেই। আম্মু নাস্তা বানান, তারপর আম্মুর হাতের মজাদার নাস্তা খেয়ে আমি আমার ক্যামেরা সেট-আপ করতে শুরু করে ফেলি কারন ওইদিন ও আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও রেকর্ড করেছিলাম এবং সেই ভিডিওটিও আমার ইউটিউব চ্যানেল Azhar vai - Official এ আপ্লোড করা আছে, এই আর্টিকেলটির নিচে সেই ভিডিওটির লিংক দেয়া আছে। 


আচ্ছা যাই হোক, সকাল ৯ টার দিকে আমি ও আমার বড় ভাইয়া বাসা থেকে রউনা হই। বলে রাখা ভালো, আমাদের বাসা থেকে রেল স্টেশন প্রায় ৯/১০ কিলোমিটার দূরে। বাসা থেকে বের হয়ে আমরা শাহপরান গেইটে চলে আসি রিকশা দিয়ে। এরপর একটা সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে রেলস্টেশনের দিকে রউনা হই। সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিটে আমরা রেলস্টেশনে চলে আসি।


তার পর আমি আমার ক্যামেরা সেট-আপ নিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও শুট করা শুরু করে ফেলি। অত:পর ১০ টা ৫ মিনিটের সময় আমরা ট্রেনে উঠে আমাদের সিট খুজে বসে যাই এবং আমাদের ট্রেনটি ঠিক সময়ে অর্থাৎ সকাল ১০ টা ১৬ মিনিটের সময় সিলেটের ট্রেন স্টেশন থেকে আমাদের গন্তব্য তথা কুলাউড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে।

জার্নি শুরু হওয়ার পর কি কি করলাম?

আমাদের ট্রেন চলতে শুরু করে আর আমি ট্রেনে উঠেই আমার ক্যামেরা সেট-আপ এর সব কিছু খুলতে শুরু করি এবং খোলা শেষ হয়ে গেলে আমার সাথে থাকা ব্যাগে সব কিছু ঢুকিয়ে রেখে দেই। এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd ওয়েবসাইটে। ট্রেন ছাড়ার পরই আমি আমার আব্বুকে কল দেই এবং আব্বুকে কল দিয়ে বলি যে আমাদের ট্রেন ছেড়ে দিছে, সেইমভাবে আম্মুকেও কল দিয়ে বলি এবং উনাদেরকে আরো বলি যে উনারা যেনো টেনশন না করে,আমরা কুলাউড়া যেয়ে উনাদেরকে কল দিবো। বাসার সবাইকে জানানোর পর আমি আমার ট্রেন জার্নি উপভোগ করতে থাকি এবং ট্রেনের মধ্যে অনেক কাহিনী ঘটতে থাকে, যা আমি খুব ইঞ্জয় করি।
বলে রাখা ভালো আমাদের ট্রেনটিতে প্রায় ১২/১৩টা বগি ছিলো। আমরা ছিলাম ঝ নং বগিতে। ট্রেনের ভিতর অনেক সুন্দর ছিলো এবং পরিষ্কার ছিলো। সিলেট ট্রেন স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়েই সামনে যেয়ে আবার থেমে গিয়েছিলো কিন্তু কেনো থেমে ছিলো তা আমি নিজেও ভালো করে জানি না। অনেক প্যাচাল পাড়লাম এখন আবারো আমি আমার রিভিউতে ফিরে আসি, এখন হয়তো সময়ের কিছুটা গরমিল হতে পারে। আপনারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেইখেন। যাই হোক ওইদিনের জার্নিটা সারাজীবন মনে থাকবে।

ট্রেনের মধ্যে কি কি দেখলাম?

ট্রেন জার্নি হোক বা বাস জার্নি, সব জার্নিতেই কিছু কিছু শিক্ষনীয় ও মজার জিনিস সব সময়ই আমার চোখে পড়ে। অনেক অপরিচিত মানুষের সাথে পরিচয় হয়, অনেকের অনেক মজার কর্ম দেখে হাসি পায়। সব কিছু মিলিয়েই জার্নি উপভোগ করতে হয়।


আমাদের ট্রেন চলতে শুরু করে, আর আমিও বাহিরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকি, সত্যিই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি কতোই না সুন্দর! এরই মধ্যে আমাদের ট্রেনে সকালের নাস্তা নিয়ে ট্রেনের ২ জন কর্মচারী চলে আসেন। আমি দুইটা চিকেন কাটলেট এবং দুই কাপ কফি কিনে নেই। ভাইয়া ও আকি খেতে শুরু করে ফেলি। তারপর কল ড্রিংকস বিক্রেতাও একজন আমাদের বগিতে আসেন এবং আমি একটা কোকাকোলাও কিনে খাই, ভাইয়ার জন্য কিনি নাই কারন ভাইয়ার খাওয়ার ইচ্ছা ছিলো না।
আরো ১৫/২০ মিনিট একটা মজার কাহিনী ঘটে যায় ট্রেনের বগিতে - এই রিভিউওটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - ৫/৬ জন অতিথির আগমন ঘটে ট্রেনে এবং সেই অতিথি কারা তা হয়তো বুঝতেই পারতেছেন, আচ্ছা তবুও বলে রাখি - উনারা হচ্ছেন হিজরা সম্প্রদায়। উনারা ট্রেনের বগিতে এসেই সবার কাছ থেকে টাকা তুলতে শুরু করে দেন। আমি এবং ভাইয়া ২ জনেই উনাদের সম্পর্কে সতর্ক ছিলাম, তাই ভাইয়া আমাকে আগেই একটা ১০ টাকার নোট দিয়ে রাখছিলো। উনারা আমাদের কাছে আসার সাথে সাথেই আমি এবং আমার বড় ভাইয়া ২ জনই ১০ টাকা করে মোট ২০ টাকা দিয়ে দেই।

মজার কাহিনী ঘটে আমাদের ২ সিট সামনে বসা একটা ছেলের সাথে। ও একটা টাকাও দিবে না বলে দেয় হিজরাদেরকে। আর হিজরারা উনার মোবাইল হাত থেকে নিয়ে নেয়, ভাই রে ভাই ১০ টাকা দিয়ে দিলে কি এমন ক্ষতি হয় বুঝতে পারি না। হুদাই মানুষের সামনে নিজের মান সম্মান খোয়ানো থেকে তো ভালোই ১০ টাকা দিয়ে দেয়া। যাই হোক উনার মোবাইল নিয়ে হিজরারা বাহিরে ফেলে দেয়ার ভয় দেখায় এরপর উনি ২০ টাকা বের করে হিজরাদেরকে দেন। ১০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা দিতে হলো উনার।
আচ্ছা যেহেতু ট্রেন জার্নিটা মুলত ১ ঘন্টা ১০/১৫ মিনিটের ছিলো। আমরা সিলেট থেকে কুলাউড়া আসা পর্যন্ত প্রায় ৩ টা স্টেশন ক্রস করি। অতপর সকাল ১১ টা ২৫/৩০ মিনিটের সময় আমরা আমাদের গন্তব্য তথা কুলাউড়া ট্রেন স্টেশনে এসে নেমে যাই৷ এবং আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভ্রমন ভিডিও রেকর্ড করা শেষ করে ফেলি। যাই হোক এখন পুরো জার্নির ভালো দিক ও খারাপ দিক এবং কিছু জিনিসের উপর রেটিং দিয়ে আমার রিভিউটা শেষ করে ফেলি।

ট্রেন জার্নির ভালো/খারাপ দিক ও সার্ভিস রেটিং :

ট্রেন জার্নির ভালো দিক : ট্রেন জার্নির ভালো দিক বলতে আমার কাছে অনেক দিকই ভালো মনে হয়, যেমন বাসে করে ভ্রমণ করলে রাস্তায় যানজটে আটকাতে হয় এবং হটাত বাস ড্রাইভার ব্রেক করলে সিট একটা ঝাকিয়ে উঠে, এইসব সমস্যা ট্রেনে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ট্রেনে ওয়াশরুম এর ব্যাবস্থাও থাকে আরো খাবার - দাবারের ও আলাদা ব্যাবস্থা থাকে। এই জিনিস গুলো বাসের তুলনায় ট্রেনের ক্ষেত্রে আমার কাছে অনেক ভালো লাগে।
ট্রেন জার্নির খারাপ দিক : ট্রেন জার্নির সবচেয়ে খারাপ দিক হলো ট্রেনের শব্দ, ভাই রে ভাই পুরো মাথা হ্যাং হয়ে যায় এই শব্দে। আরেকটা খারাপ দিক হচ্ছে হিজরাদের ধারা ট্রেন যাত্রীদের মানহানীর ব্যাপারটা। আমার চোখে ট্রেন জার্নির আর কোন খারাপ দিক আছে বলে মনে হয় না। ( আমার নিজের ব্যাক্তিগত মতামত, আপনাদের সাথে নাও মিলতে পারে )
ট্রেন জার্নির মোট সময় : আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো সিলেট রেলস্টেশন থেকে সকাল ১০ টা ১৫/১৬ মিনিটে, এবং আমরা কুলাউড়া রেলস্টেশনে যেয়ে পৌছাই সকাল ১১ টা ২৫/৩০ মিনিটের সময়। সুতরাং বলাই যায় আমরা প্রায় ১ ঘন্টা ১০/১৫ মিনিট জার্নি করেছিলাম।
ট্রেনের সার্ভিস রেটিং : ট্রেনের সার্ভিস আমার কাছে সব সময়ই ভালো লাগে। তাই ট্রেনের স্টাফ এবং বাহ্যিক ও ভিতরের সব কিছু মিলিয়ে আমি ট্রেনের সার্ভিসকে ০৯/১০ দিবো।
ট্রেন জার্নির সতর্কতা : নিজ নিজ জিনিস পত্র নিজ নিজ দায়ীত্বে রাখবেন এবং হিজরা দেখলেই তর্কাতর্কি না করে ১০ টাকা দিয়ে বিদায় জানাবেন অন্যথা আপনার মান সম্মান ধুয়ে দিতে ওদের ১০ মিনিটও লাগবে না।
ট্রেন কর্তৃপক্ষের প্রতি উপদেশ : ট্রেনে হিজরাদের না উঠার ব্যবস্থা করলে অনেক বেশি ভালো হয় প্রত্যেকটা যাত্রীদের জন্য। আশা করি আপনারা ব্যাবস্থা নিবেন - অগ্রীম ধন্যবাদ

পুরো ভ্রমণের ভিডিও লিংক কিভাবে দেখবেন?

আমার ইউটিউব চ্যানেলে অলরেডি ভিডিও আপ্লোড করা আছে, আপনারা যারা ভিডিওটি দেখতে চান ,তারা নিচের বাটনটি তে ক্লিক করুন।

ভিডিও দেখতে উপরে ক্লিক করুন

পুরো রিভিউটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, রিভিউটা কেমন লাগলো, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।


যেকোন প্রয়োজনে আমাকে মেইল করুন - ets2ridoy@gmail.com

Post a Comment

0 Comments