কুয়াশাময় রাতে ভৌতিক বাস ও এম্বুলেন্স এর সাথে ঘটে যাওয়া আমার অভিজ্ঞতা | ভৌতিক বাস জার্নি রিভিউ - ০১

রিভিউ টপিক : আজকে আপনাদের সাথে কুয়াশাময় রাতে ভৌতিক বাস ও এম্বুলেন্স এর সাথে ঘটে যাওয়া আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো এবং এইটা আমার journeykothabd.com ওয়েবসাইটের ভৌতিক বাস জার্নি রিভিউ - ০১

ছবি কারিগর - আয়মান আস্ফী

রিভিউ ক্যাটাগরি : ভৌতিক বাস ভ্রমণ
রিভিউ নাম্বার : ০১
ভৌতিক বাস কোম্পানীর নাম : ভূত এক্সপ্রেস
ভৌতিক বাসের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার : খেয়াল করি নাই।
ভৌতিক বাসের রুট : ঢাকা - সিলেট
ভ্রমণের তারিখ : অজানা

কুয়াশাময় রাতে ভৌতিক বাস জার্নি রিভিউ - ০১

একটা কুয়াশাময় রাতের ভৌতিক গল্প আপনাদের সাথে আজকে শেয়ার করবো। আমি একটা কাজে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় গিয়েছিলাম। কাজ শেষ করে ওই রাতে ওইখানে থাকার চিন্তা মাথায় আসলো। কারন যেই গ্রামে জরুরী কাজ এর জন্য গিয়েছিলাম সেই গ্রামটা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। আর যেহেতু আমি বাস লাভার - শুধু মাত্র ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাস গুলোকে আরো কাছ থেকে দেখার জন্য ওইদিন রাতে ওইখানে থেকে যাওয়ার প্লেন করি। যেই ভাবা সেই কাজ, ওইদিন রাতে খাওয়া দাওয়া করে আমি বাসা থেকে বের হই রাত ১১ টা ৩৫ মিনিটের সময়। ইচ্ছা ছিলো ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে হেটে গ্রামের পাশেই একটা বাজার আছে ওইখানে যাবো। 


যেই বাসাতে উঠেছিলাম সেই বাসা থেকে বের হয়ে ওই কুয়াশাময় রাতে আমি মহাসড়ক এর পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে একটা লাইটহীন বা লাইট নেভানো গাড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়ায় (লাইট বন্ধ থাকায় আমি সেই গাড়িটা সম্পর্কে ধারনা করতে পারছিলাম না)। ভিতর থেকে একজন আমার নাম ধরে আমাকে ডাকে এবং বলে, " এই আজহার, আমরা রাস্তা ভুলে গেছি, সিলেট যাওয়ার রাস্তাটা কোনদিকে? "।  আমি তখন এতো কিছু চিন্তা না করে বলে দেই, " আপনারা যেই রাস্তা দিয়ে আসছেন, ওইটাই সিলেট যাওয়ার রাস্তা "। তারপর গাড়ির ড্রাইভিং সিটে তাকিয়ে ড্রাইভারের চেহারা পুরো স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারলাম না - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - কারন একেতো গাড়িটার লাইট বন্ধ ছিলো আর পাশাপাশি অনেক কুয়াশাও ছিলো। যাই হোক, ড্রাইভার আমাকে বললো - "ধন্যবাদ আজহার, তোমার সাথে আবার দেখা হবে, আজকের মতো চলে যাচ্ছি "।

 এর পর কি হলো?

এই কথা বলেই গাড়ি টান দিয়ে দিলো, গাড়ি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, গাড়ির শেইপ এবং পাশের লেখা দেখে আমি বুঝতে পারলাম যে, এটা একটা লাশবাহী এম্বুলেন্স ছিলো। তারপর আমি চিন্তা করতে থাকলাম, আরেহ উনি আমার নাম কিভাবে জানলো?? আরো অনেক কিছু মাথায় আসলো এবং আমি এইটা চিন্তা করতে করতে আমি হাটতে থাকলাম সেই বাজারের উদ্দেশ্যে। বাজারটা অবস্থিত ছিলো সেই গ্রাম থেকে সিলেট আসার দিকে। আমি হাটতে থাকলাম, প্রায় ১৫/২০ মিনিট হেটে গেলাম। তারপর আমি খেয়াল করলাম, যেই এম্বুলেন্সটা আমাকে সিলেট যাওয়ার রাস্তা কোনদিকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, সেই এম্বুলেন্স টা এখন আমার সামনে দিয়ে আবার ঢাকার অভিমুখে চলে গেলো। এই দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম আমি। আর চিন্তা করতে থাকলাম আমার সাথে কি ঘটতেছে এইসব। বলে রাখা ভালো এম্বুলেন্সটা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার নাকে একটা পঁচা গন্ধ আসলো আর পাশাপাশি অন্যরকম কিছু বিকৃত শব্দ। পুরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। 


যাই হোক অনেক হাটাহাটির পর আমার মাথায় চিন্তা আসলো যে, আরেহ রাস্তা শেষ হচ্ছে না কেনো? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ঠিক ১২ টা ০৫ মিনিট বাজতেছে সময়। সকালেই দেখলাম ওই গ্রাম থেকে মাত্র ১০ মিনিট হাটলেই সেই বাজারে যাওয়া যায়। বিকাল বেলা গেলাম ও দুইবার। আরো ৫ মিনিট হাটলাম, ঠিক ১২ টা ১০/১১ মিনিটের সময় একটা বর আকৃতির বাস এসে আমার পাশে একটু ব্রেক দিলো, বাসের দরজার গ্লাস খুলে একজন ব্যাক্তি আমাকে বললো, " আপনিতো বাজারে যাচ্ছেন তাই না? চলে আসুন আমাদের বাসে আমরা আপনাকে বাজারে নামিয়ে দিবো "। - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - এই কথা শুনে আমিতো পুরো অবাক। আমি বাজারে যাচ্ছি এটা উনি জানলো কিভাবে। আশেপাশে অনেক কুয়াশা ছিলো, তাই বাস দেখেও তা কোন কোম্পানির ছিলো তা বুঝে উঠতে পারি নাই। অন্যদিকে এতো সময় হাটার পর ও রাস্তা শেষ হচ্ছে না দেখে আমি উনার কথা মতো বাসে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আর অন্যদিকে এক প্রকার ধস্তাধস্তি করেই হেল্পার ভাই আমাকে বাসে তুললো। 


বাসে উঠে আমি দেখলাম, বাসের মধ্যে কেউ নেই - অর্থাৎ আমি, বাসের হেল্পার ও ড্রাইভার এই ৩জনই আছি বাসের মধ্যে । বাকি পুরো বাসের ৪১ টা সিট খালি। ভাই রে ভাই, আমার সাথে এসব কি ঘটতেছে?? আমি নিজেই বুঝে উঠতে পারতেছি না। যাই হোক তবুও বুকে সাহস নিয়ে সামনের A2 সিটে বসে গেলাম। বাস ও চলতে শুরু করলো। সামনের রাস্তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না কুয়াশার জন্য। হটাত খেয়াল করলাম একটা হানিফ বাস অনেক হর্ন দিচ্ছে, প্রায় ৪/৫ মিনিট হর্ন দেয়ার পর আমাদের বাসের ডান পাশে চলে আসলো, পাশে এসেও ওই বাসের ড্রাইভার খালি হর্ন দিচ্ছিলো এবং বাসের প্রায় প্রত্যেকটা যাত্রী আমার বাসের দিকে তাকিয়ে আছে। এবং অনেকের চেহারা দেখে যা বুঝলাম, সবাই অবাক হয়েই তাকিয়ে ছিলো আমাদের বাসটার দিকে ( বলে রাখা ভালো ওই হানিফ বাসের ভিতরের লাইট গুলো জালানো ছিলো, তাই ওই বাসের প্রত্যেকটা যাত্রীর চেহারা আমি দেখতে পারতেছিলাম)। যাই হোক হানিফ বাসটা ওভার টেক করে, এবং ওভারটেক করার ৩০/৪০ সেকেন্ড এর মধ্যে বাসটি কুয়াশার মধ্যে নাই হয়ে গেলো। 


আমাদের বাস প্রায় আরো ২০ মিনিট চললো, চলার পর খেয়াল করলাম হানিফ বাসের মতোই পাশ দিয়ে একটা এনা বাস অনেক হর্ন দিচ্ছিলো এবং হানিফ বাসের যাত্রীদের মতো এনা বাসের যাত্রীরাও আমি যেই বাসে বসে ছিলাম, ওই বাসের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো এবং এনা বাসের হেল্পার আমাকে ইশারা দিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিলো। উনার ইশারা দেখে আমি কিছুই বুঝতে পারি নাই। - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - হানিফ বাসের মতোই এনা বাস ও আমাদের ওভারটেক করলো এবং কিচ্ছুক্ষণ পর নাই হয়ে গেলো বা কুয়াশার মধ্যে মিলিয়ে গেলো। এরপর আমাদের বাস ও তার ধীর গতিতে চলতে থাকলো। অত:পর আমি সাহস করে বাসের পিছনে তাকিয়ে যা দেখলাম, তা বলে বোঝানোর মতো না। বাসে প্রায় ৫০/৫৫ জন যাত্রী। বেশিরভাগ যাত্রী বসে আছে আর কয়েকজন যাত্রী দাড়িয়ে আছে। এবং সবাই আমার দিকে এক পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। এইটা দেখে ভয়ে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এমন লাগতেছিলো।

কিভাবে বেঁচে ফিরলাম?

যাই হোক। আমি সাহস করে বাসের ড্রাইভারকে বললাম, ড্রাইভার সাহেব আমাকে বাস থেকে নামিয়ে দিন, আমি আর আপনাদের সাথে যাবো না। এইটা বলে আমি ড্রাইভিং সিটে তাকাতেই দেখি। ড্রাইভার সাহেব এবং হেল্পার দুজনই আমার দিকে অনেক রাগী চোখে তাকিয়ে আছে এবং আমি আরো খেয়াল করলাম ড্রাইভার সাহেব এর মাথা পুরো ১৮০ ডিগ্রি কোনে ঘুরানো। আরো ভালোভাবে আপনাদেরকে বুঝাই। উনার পিঠের দিকে উনাকে মাথা ঘুরানো। এই দেখে আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারতেছিলাম না। 


অত:পর সাহস নিয়ে কি করবো চিন্তা করতেছিলাম এরই মধ্যে দেখি সামনে থেকে একটা শ্যামলী বাস সজোরে হর্ন দিতে দিতে আসতেছে আরেকটা ট্রাকের ওভারটেক করে, অত:পর এসে আমাদের বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটায় এবং আমি কোন কিছু চিন্তা করার আগেই এক মিনিটের মধ্যেই সব কিছু শেষ হয়ে যায়। আমি আমতাআমতা চোখে দেখতেছিলাম আমাদের বাসটা ধীরে ধীরে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে, আর আমার চারপাশে রক্ত আর রক্ত এরপর আমিও অজ্ঞান হয়ে গেলাম।


তারপর হটাত করে আমার শরীরে কারো ছোয়া পাই, চোখ খুলে দেখি সকাল হয়ে গেছে এবং আমার আম্মু আমাকে ডাকতেছে নাস্তা করার জন্য। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, এতোক্ষন আমার সাথে যা ঘটতে ছিলো তা আমার স্বপ্ন ছিলো। যাই হোক স্বপ্নটা দেখে খুবই ভয় পেয়েছিলাম। তারপর ঘুম থেকে উঠে আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ফেললাম। 


বি,দ্র, - আজকের রিভিউ পুরোটা পড়ে অনেকের মনে ভয় লাগতে পারে - এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে - কিন্তু বলে রাখা ভালো এই সিরিজের সব গুলো রিভিউ-ই হবে কাল্পনিক - তাই নির্ভয়ে থাকতে পারেন। পুরো রিভিউটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, রিভিউটা কেমন লাগলো, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।


যেকোন প্রয়োজনে আমাকে মেইল করুন - ets2ridoy@gmail.com

Post a Comment

0 Comments