রিভিউ টপিক : আজকের ভ্রমণ গল্পতে আমি মুলত গ্রামীন ট্রাভেলস নন-এসি বাস ভ্রমণ করে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার জার্নি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমার এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journykothabd.com ওয়েবসাইটে এবং এইটা বাস জার্নি রিভিউ - ১০
ছবি কারিগর - শুভন সজিব ও অনু |
রিভিউ ক্যাটাগরি : বাস ভ্রমণ
রিভিউ নাম্বার : ১০
বাস কোম্পানীর নাম : গ্রামীন ট্রাভেলস
বাসের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার : ঢাকা মেট্রো ব ১৪-১০১৮
ভ্রমণের তারিখ : ২৯ই মে ২০২৩
ঢাকা - রাজশাহী বাস জার্নি রিভিউ - ১০
প্রথমেই সবার কাছে ক্ষমা পার্থী কারণ রাতে রিভিউ দিবো বলে সকালে দিচ্ছি। আসলে রাতে অনেক ক্লান্ত থাকায় সাথে সাথে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তাই সকালে উঠে রিভিউ দিচ্ছি।
আমি শুনেছিলাম গ্রামিণ রিলেক্সে যাত্রা করে, ৮০ গতি মেইন্টেন করে। তাই রাজশাহী প্রথম যাবো বলে তাদের ই পছন্দ করি। এছাড়াও তাদের নিয়ে আমি কোনো অভিযোগ দেখি নাই।
এডমিশন টেস্ট দিবো বলে রাজ রাজশাহী যাবো। যদিও এডমিশন শুধু বাহানা। পরিক্ষার কোনো প্রস্তুতি নাই বললেই চলে। ঢাকা আসি ১২.৩০ এ। তারপর কল্যানপুর কাউন্টারে যাই। সেখানে গিয়ে অনলাইন টিকেট দেখাতেই তারা আমাকে প্রিন্ট টিকেট দিয়ে দেয়। তারপর খাওয়া দাওয়া করে কাউন্টারে বসে থাকি। লক্ষ করলাম তাদের এখানে দুই টা কাউন্টার। একটায় এসি আরেক টায় নন এসি করা। তবে যে যেখানে পারছে বসছে। এসি বাস আর নন এসি বাস এর জন্য আলাদা করা না।
২.২৫ এ ডাক আসে যারা ২.৩০ এর যাত্রী সবাই কোস্টারে উঠেন। যথারীতি আমিউ উঠি। তারপর ট্যাকনিক্যাল এ গিয়ে গাড়িতে উঠি। গাড়ির ছবি তুলার সময় পায়নি। বলে জলদি উঠতে। তার পর বাস চলা শুরু করে। ওই দিন যাত্রীরা এক কাউন্টার বলে আরেক কাউন্টার, রাস্তার পাশে এসব জায়গা থেকে উঠছে। যার ফলে অনেক টা লোকাল মনে হচ্ছিলো। কিন্তু টিকেট করা যাত্রী তাই বোঝা যায় লোকাল না। গাড়ি চল্লিশ সীটের। চন্দ্রা এসে লাস্ট যাত্রী নেয়। চন্দ্রা আসতে আসতে ২ ঘন্টা পার হয়ে যায়। তার পর ঢাকা টাঙ্গাইল হাইওয়ে।
এর পর গাড়ি ৮০-৯০ চলতে লাগল। ড্রাইবার অনেক স্মুথ চালাচ্ছিলেন। মাঝে মাঝে ১০০ ও উঠাচ্ছিলেন। এই রোডে আমি প্রথম গিয়েছি। রোড টা ভালোই লাগছিলো। তবে এটা বলতে হবে যে এই রোডে n1 এর মত এতো ট্রাক নাই। যেটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে। গান শুনতে শুনতে রোড ভিউ ইনজয় করতে লাগলাম। ঠিক তখনই একতা, জেনিন, অরিন একসাথে ওটি দিলো। গাড়ি এমনিতেই স্পিড লিমিটের উপরে চলছিলো তাই এটা ভেবে নিয়েছিলাম যে তারা হারিয়ে যাবে। কিন্তু গ্রামীণ আমাকে ভুল প্রমাণ করল। সে স্পিড ১২০ এ তুলে তাদের তিনটারে এক সাথে ওটি দিলো। এটা দেখে আমি ত অবাক। ওটির স্টাইল টা বলি। গাড়ি দুইটা ডানে একটা বামে। প্রথম বামে গিয়ে ডানের অরিন অভার টেক, তারপর ডানে গিয়ে জেনিন কে ওভারটেক তারপর আবার বামে গিয়ে ডানের একতা কে ওভারটেক। এই ওভার টেক খুবই অল্প সময়ে ঘটে গেলো। তারপর কান থেকে ইয়ার ফোন খুলে ওয়ানজের ওয়াজ শুনতে শুনতে স্পিড ড্রাইভ উপভেগ করতে লাগলাম। এলেঙ্গা পর্যন্ত ১০০+- এ ড্রাইভ করতে লাগল। তখন সেই রকম নামি দামি ব্যানর এর আর দেখা পায়নি। এলেঙ্গা থকে ওয়ান ওয়ে। তাই গাড়ি স্লো হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে ৬.১০ এ ফুড ভিলেজ এ ডুকি।
ফুড ভিলেজে নেমে আমি আবার অবাক হই। এটা যেনো রেস্টুরেন্ট না মেলা। এত মানুষ এত বাস। একজন বাস লাভার হওয়ার দরুন আমার পেটের ক্ষিধার চেয়ে বাসের প্রতি নজর বেশি। তাই তো একটা আইসক্রিম নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাস দেখতে লাগলাম। ভলবো, ন্যশনাল এর স্কানিয়া আর হুন্দাইকে ওই দিন অনেক কাছ থেকে দেখলাম। বিশেষ করে ভলবো আর স্কানিয়া কে দানব এর মত লাগছিলো। যেই একটা ভালো লাগা কাজ করছিলো মনে।
সাইড ভিউ |
কাউন্টার |
একট মজার ঘটনা বলি।
যেহেতু বাসের ছবি তুলতে পারি নাই তাই ভেবে রেখেছি হোটেল থেকে নেমে ছবি তুলব। একটা আইসক্রিম নিয়ে যখন বাস এর কাছ আসি তখন দুইটা মেয়ে এখানে দাড়ানো। এরা সরার নাম ই নিচ্ছে না। ফুড ভিলেজ একটা রাউন্ড দিয়ে এসে দেখি এরা এখানেই। মানে কী আর বলবো। পুরো ৩০ মিনিট বাসের সামনে দাড়িয়ে আছে। যেনো ভিতরে স্বর্ণ রেখে আসছে। আরে বইন একটু সাইডে দাড়া। না একদম মাঝখানে। এদের জন্য মত মত ছবি তুলতে পারি নাই। পরে বাস ছাড়ার সময় কোনে রকম একটা ছবি তুলি যেনো আপনাদের দেখাতে পারি।
৬.৪০ এ গাড়ি আবার চলতে শুরু করে। একটু সামনেই পেট্রোল পাম্প থেকে তেল নেয়। তারপর আবার শুরু। নাটোর পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ফাকা ছিলো। আর সেখানের রোড ভিউ ত জানেন ই। ওয়ানজের সাউন্ড, সূর্য যায় যায়, ৮০ স্পিড আর এত সুন্দর ভিউ নিয়ে অনেক আনন্দের একটা সময় কাটালাম। মন টা একদম ভরে গেলো।
নাটোর থেকে রাস্তায় অনেক চাপ। দুই পাশে গাড়ি লাইন ধরে চলছিলো। ওভারটেক এর কোনো সুযোগ ই নাই। তাছাড়া জেনিন, একতা, ওরিন ছাড়া রাস্তায় সেদিন অন্য কোনো গাড়ির আমাদের লাইনে চোখে পরে নাই যে চেস করব। তারপর ৯.২০ এ আমাদের রাজশাহী শহরের অনেক টা আগেই নামতে হয়। বাস ভিতরে ডুকতে দিচ্ছিলো না।
এবার আসি আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে।
কাউন্টার
কাউন্টার অনেক ঘোছানো ছিলো। সেই সাথে ব্যবহার ও ভালো।
স্টাফ
যাত্রী ঘননা ছাড়া গাইড এর কোনো কাজই ছিলো না। কোনো যাত্রীর সমস্যা হয়নি যে গাইডকে ডাকতে হবে।
আর হেল্পার ত ইন্জিনে পা তুলে বসে ছিলেন। নাটোর এর আগ পর্যন্ত ড্রাইভার কে সহযোগীতা করার প্রয়োজন হয়নি।
ড্রাইবার
ওনার কথা কী বলবো। ওনার বয়স ৪০-৪৫ হবে। একটু কালো গায়ের রং। ওনার ড্রাইভিং স্কিল অনেক ভালো। গাড়ির কোনো মিটার( rpm and speed) কাজ করে না। কিন্তু ওনার গিয়ার শিফটিং এত স্মুথ যে বুঝা যায় না। সেই সাথ ব্রেক ও অনেক স্মুথ ভাবে করেন।
গ্রামীণ এ উঠার আগে ধরেই নিয়ে ছিলাম স্পিডি জার্নি হবে না। ৭৫-৮০ থাকবে। কিন্তু নাটোর পর্যন্ত ৮০-৯০ কমন স্পিড ছিলো। সুযোগ পেলে ত ১০০+ ছিলোই। তবে এটা নিয়ে আমার অভিযোগ এর কিছুই নেই। কারন ওনি কোনো রিস্ক নেন নি। বুঝে শুনে স্পিড উঠিয়েছেন। এছাড়া স্পিড দিয়েই ৬ ঘন্টার জার্নি ৭ ঘন্টা লাগছে আর স্পিড লিমিট মেনে চললে ১০-১১ ঘন্টা লাগত। কারন গাড়ির ত জানেন ই পরিক্ষার কারনে গাড়ির প্রেশার কেমন।
অভার অল রেটিং
স্টাফ ১০/০৯ (স্মুকিং করেছেন একবার তবে জানালার কাছে গিয়ে আর সাথে এয়ার ফ্রেশার ছেড়ে দিয়েছিলেন তাই গন্ধ তেমন লাগিনি
ড্রাইভিং ১০/১০
গাড়ি ১০/০৯ (সীট একটু পরিষ্কার রাখলে পারতো। তবে এতটাও অপরিষ্কার না আর। ওই মারসা আর ইউনিক এর মত না।)
গ্রামীণ এর একটা জিনিস ভালো লাগলো যে ওরা বাড়াই বলে নাই কোনো কিছু। ওরা যা তাই প্রকাশ করছে। অনেক অপারেটর যেই ভুয়া কথা বলে কাউন্টারে। গাড়ি এমন হেমন, কত কী।
গাড়িতে কয়েক বার কিছু লোক পোকে উঠতে চায়ছিলো। কিন্তু স্টাফ রা নেয় নাই। যেটা অনেক ভালো লাগছে।
গাড়ির স্টাফ দের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নাই। গ্রামীণ ট্রাভেলস কতৃপক্ষ পোস্ট দেখে থাকলে এটাই বলবো। আমার এই পোস্ট কে দেখে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না নেওয়ার জন্য
এই হলো গ্রামীণ নিয়ে আমার বর্ণনা আর অভিজ্ঞতা। ভূল ত্রুটি মর্জনীয়।
পুরো রিভিউটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, রিভিউটা কেমন লাগলো, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
বাস যাত্রী / রিভিউ লেখকের নাম : Sakibul Hasan , আমাকে ফলো করতে আমার নামের উপর ক্লিক করুন এবং ফেইসবুকে যেয়ে ফলো করে দিন।
রিভিউটি কালেক্ট করা হয়েছে : ফেইসবুক ভিত্তিক গ্রুপ BD Bus Lover থেকে।
যেকোন প্রয়োজনে আমাকে মেইল করুন - ets2ridoy@gmail.com
0 Comments