রিভিউ টপিক : আজকের ভ্রমণ গল্পতে আমি মুলত মামুন এন্টারপ্রাইজ কোম্পানির নন - এসি বাস ভ্রমণ করে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাওয়ার জার্নি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমার এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে এবং এইটা বাস জার্নি রিভিউ - ১৮
ছবি কারিগর -হাম দান |
রিভিউ ক্যাটাগরি : বাস ভ্রমণ
রিভিউ নাম্বার : ১৮
বাস কোম্পানীর নাম : মামুন এন্টারপ্রাইজ
বাসের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার : ঢাকা মেট্রো ব ১৫-৩২০৬ (সাবেক এনা, স্টার লাইন)
বাস রুট : চট্টগ্রাম - সিলেট - সুনামগঞ্জ
ড্রাইভার : আলী উস্তাদ
ভ্রমণের তারিখ : ২৬ই নভেম্বর ২০২৩
চট্টগ্রাম - সিলেট বাস জার্নি রিভিউ - ১৮
ফাউল এন্ড ওভারডেইট রিভিউ তাই চাইলে এড়িয়ে যেতে পারেন। শুধু শুধু সময় নষ্ট করার দরকার নাই।
এবার আসি ফাউ আলোচনায় , রিভিউটিকে আমি ৩টা পর্বে বিভক্ত করে দিয়েছি , যেনো আপনারা ভালোভাবে পরতে পারেন। নিচে পর্ব গুলো ধাপে ধাপে দেয়া হলো।
পর্ব - ১ ( চট্টগ্রাম থেক হোটেল বিরতি পর্যন্ত )
চট্টগ্রাম অলঙ্কার মোড়ে রাত ঠিক ৮.টা ৩০ মিনিটে গাড়ি আসে এবং ১০ মিনিটের মধ্যেই যাত্রী নিয়ে টান দেয়। মাঝপথে দুয়েকটা কাউন্টার থেকেও যাত্রী নেয়।
বলতে গেলে সেদিন প্রচুর ট্রাকের চাপ ছিল। তবে উস্তাদ তার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে যথেষ্ট ভালো ড্রাইভিং করেছেন। যার কারণে সহজে গ্যাপ মেরে বের হয়ে গেছেন।
মাঝপথে লন্ডন এক্সপ্রেস এর ম্যান ছাড়া আর কাউকে আমাদের ওভারটেক করতে দেখি নাই। উস্তাদ কিন্তু গাড়ি 90 এর উপর তুলেন নি। কুমিল্লার কাছাকাছি গিয়ে একটু ফাঁকা পেয়ে হয়তো একটু টান ধরেছিলেন তবে তাও বেশিক্ষণ ধরে রাখা সম্ভব হয় নি। টাইম মেন্টেইনের ক্ষেত্রে উস্তাদ সব সময় সচেতন ছিলেন।
অবশেষে রাত 12 টা 15 মিনিটের দিকে কুমিল্লা হাইওয়ে তে হোটেল বিরতি দেয়। এবং 25 মিনিট পর গাড়ি ছেড়ে দেয়। এবং হোটেল থেকেই Rj Sayem ভাইয়ের যাত্রা শুরু হয়। মূলতঃ উনার সাথেই বিশেষ একটা কাজে সিলেট যাওয়ার প্লান টা করেছি।
এইটাই আমার ট্যুরমেট হিসেবে ছিলো |
ফ্রন্ট সাইড ভিউ |
পর্ব - ২ ( হোটেল বিরতি থেকে নামাজের বিরতি পর্যন্ত )
এবার এন ওয়ানের সেই সমতল রাস্তা থেকে কুমিল্লা দেবীদ্বারের দিকে ছুটে চলা শুরু হলো। কিছুদূর গেলেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহাসিক সমতল পাহাড়ি রাস্তার দেখা মিলবে। তাই প্রস্তুতি নিয়েই বসে ছিলাম। গাড়ি যতই এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ বাড়ছে ঠান্ডার মাত্রা ও।
যাই হোক এবার এসেই গেলাম সেই ঐতিহাসিক রাস্তায় যেটাতে গাড়ির আগা উপরের দিক থাকলেও ছাপা থাকে নিচের দিকে। আবার ডানে মোড় নিতে গেলে দেখা যায় বামে চলে যায়। এরই মাঝেমধ্যে মাঝেমধ্যে দেখা হচ্ছে লম্বা লম্বা টিসি ট্রাকের সিরিয়ালের। তাদের ও সাইড দিতে হচ্ছে গাড়ির এক চাকা রাস্তা থেকে দুই থেকে তিন ফুট নিচে নামিয়ে।
তবে আলহামদুলিল্লাহ আলী উস্তাদ এই রাস্তার সাথে বেশ পরিচিত হওয়ায় গাড়িটা দারুন ভাবে কাবু করে রেখেছেন। যার কারণে এতো ভাঙ্গা রাস্তা আর লিফ সাসের ওয়ান জে বাসেও যাত্রীরা আরামছে নিন্দরাম ম্যা পাছ গিয়া মালুম ভি নেহি হ্যায় 👌 ভাঙ্গা রাস্তা টুকু বনাটে একদম সামনে দরজার চিপায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে উপভোগ করলাম। কিছুক্ষণ পর একটু ভালো রাস্তায় উঠার পর সিটে গিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। একদম ফজরের নামাজের বিরতিতে ঘুম ভাঙ্গে।
পর্ব - ৩ ( নামাজের বিরতি থেকে সিলেট পর্যন্ত )
ছবিতে - আলি ওস্তাদ |
নামাজের পর ঠিক 14 মিনিট গাড়িটা ফুল প্রেশার দিয়ে টান ধরে রাখার পরই দেখলাম আমরা হুমায়ূন চত্ত্বরে চলে এসেছি 😳 কিন্তু তখন ও বিশ্বাস হচ্ছিল না। এতো তাড়াতাড়ি সিলেট চলে আসলাম ?
যাই হোক টিকিটের মেয়াদ যেহেতু শেষ এখন আর ইচ্ছে করলেও বসে থাকা যাচ্ছে না। তাই উস্তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে নেমে পড়লাম প্রিয় পূণ্যভূমি সিলেটের পিচ-ঢালা মাটিতে।
এবার নেমে আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলাম সিলেট কদমতলী কেন্দ্রীয় টার্মিনালের দিকে। ওখানে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।
চিন্তা করলাম রাতে এই গাড়িতে এই উস্তাদের সাথেই ফিরব প্রানের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের দিকে। তাই সুপারভাইজার কেও বলে রাখা হয়েছিল। সুপারভাইজার সাহেব যথেষ্ট ভালো মানুষ ছিলেন। যাত্রীদের সাথে অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে সেবা প্রদান করেছেন।
তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাউন্টারে কল দেই। কাউন্টার থেকে বলা হলো অগ্রিম পেমেন্ট ছাড়া টিকিট রাখা যাবে না। কিন্তু আমরা তখন জাফলং এর গাড়িতে উঠে পড়েছি , তাই আর বিকাশের সুযোগ ও ছিল না। যাই হোক কপালে হয়তো নেই তাই কি আর করা !
কিন্তু দুপুর বেলা ১২ টার দিকে সুপারভাইজার সাহেব কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ; আমরা যাবো কিনা ? আমরা বললাম আমরা আপনার সাথেই যেতে ইচ্ছুক। আমাদের জন্য সামনের দুটো সিট বুকিং দিয়ে রাখেন। তারপর উনি বললো , ঠিক আছে আপনারা ৮. টা ৩০ মিনিটের দিকে সিলেট কাউন্টারে থাকবেন। বললাম ওকে।
এটা শোনার পর মনটা হালকা হয়ে গিয়েছিল।
তাই আমরা নির্ধারিত সময়ের কাউন্টারে পৌঁছার জন্য আসরের আগেই জাফলং থেকে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সিলেটের আসার পর কাউন্টার থেকে কল দিয়ে জানানো হয় যে আমাদের টিকিট গুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এবং চট্টগ্রামের পরবর্তী লিলেন্ড গাড়িতে বুকিং দেয়া হয়েছে। এটা শোনার পর এতো কষ্ট করে তাড়াহুড়ো করে সিলেট আসার কষ্ট টা যে কত পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল তা হয়তো বোঝানো সম্ভব না। তাই কাউন্টারে নিষেধ করে দিয়েছিলাম। আমাদের জন্য টিকিট রাখার দরকার নাই। ওই দুটোও বিক্রি করে দেন।
এসব কথা বার্তা শেষ করে ভিন্ন উপায় খুঁজে বের করলাম। এবং ৮.৩০ এর দিকে অন্য গাড়িতে উঠার পর কাউন্টার থেকে আবারো কল দেয়। এবং এবারের কলের ধরনটা ছিল ভিন্ন ! আমাদের জিজ্ঞেস করা হচ্ছে আমরা টিকিট বুকিং দিয়ে আসছি না কেন ? বললাম ; আমাদের বুকিং দেওয়া গাড়িতে সিট রাখেন নি কেন ? এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উনি উনার টাই বলতে থাকলেন। যাই হোক কল কেটে দিলাম।
মনে মনে ভাবলাম তাকদিরে লিখা না থাকলে শত চেষ্টা করেও তো আর পাওয়া যায় না। সেটাই হয়েছে আমাদের সাথে।
তবে মামুন এন্টারপ্রাইজ কে আমি আন্তরিক ভাবে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। উনারা উনাদের কাউন্টার ম্যান গুলোকে এতো সুন্দর কড়া ট্রেনিং দেওয়ার জন্য। যাত্রী যাক আর না যাক! তাতে কিছু আসে যায় না। বরং উনাদের টাই সব সময় এগিয়ে রাখতে সর্বদা সচেষ্ট। গতবারও চট্টগ্রাম থেকে সুনামগঞ্জ গিয়েছিলাম মামুন এন্টারপ্রাইজে কিন্তু ফিরতি টিকিট কাটতে গিয়ে সুনামগঞ্জের পরম শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত কাউন্টার ম্যান এর সোজা জবাব শুনে , সিলেট এসে ভিন্ন গাড়িতে করে চট্টগ্রাম আসতে হয়েছিল। এবার ও ঠিক একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো। যাক ব্যাপার না। এসব হয়তো তুলে ধরা দরকার তাই তুলে ধরেছি। আমরা সাধারণ মানুষ। আমরা হয়তো মামুনের উন্নত সার্ভিস পাব না। বেশি থেকে বেশি লোকালে করে আসা যাওয়া করতে হবে আর কি। সমস্যা নাই , আগামীতে আবারো নির্লজ্জের মতো যাওয়ার ট্রাই করব। যদি কপাল ভালো থাকে তাহলে হয়তো একটা টিকিট পেলেও পেতে পারি। এই আশা ব্যক্ত করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
পুরো রিভিউটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ, রিভিউটা কেমন লাগলো, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
বাস যাত্রী / রিভিউ লেখকের নাম : Ham Dan , আমাকে ফলো করতে আমার নামের উপর ক্লিক করুন এবং ফেইসবুকে যেয়ে ফলো করে দিন।
রিভিউটি কালেক্ট করা হয়েছে : ফেইসবুক ভিত্তিক গ্রুপ Bus Lover থেকে।
যেকোন প্রয়োজনে আমাকে মেইল করুন - ets2ridoy@gmail.com
0 Comments