রিভিউ টপিক : আজকের ভ্রমণ গল্পতে আমি মুলত শ্যামলী এন.আর ট্রাভেলস Scania K360 বাস ভ্রমণ করে টেকনাফ থেকে ঢাকা যাওয়ার জার্নি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমার এই রিভিউটি আপ্লোড করা হয়েছে journeykothabd.com ওয়েবসাইটে এবং এইটা বাস জার্নি রিভিউ - ২৩
ছবি কারিগর - রাহিদ রিয়াদুল ইসলাম ও ফারহান সামির |
রিভিউ ক্যাটাগরি : বাস ভ্রমণ
রিভিউ নাম্বার : ২৩
বাস কোম্পানীর নাম : শ্যামলী এন.আর ট্রাভেলস Scania K360
বাসের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার : ঢাকা মেট্রো ব ১৫-২১০২
বাস রুট : টেকনাফ - ঢাকা
ড্রাইভার : মোস্তফা (এক্স সোহাগ ৬১৩২)
প্যাসেঞ্জার গাইড : রাসেল ভাই
ভাড়া : ১৬০০ করে
ভ্রমণের তারিখ : ২৪/১২/২০২৩
টেকনাফ - ঢাকা বাস জার্নি রিভিউ - ২৩
সেইন্টমার্টিন থেকে ঢাকা ফিরেছি ২ সপ্তাহ হয়ে গেলো প্রায়, কিন্তু আইলসেমির কারনে আর টেকনাফ থেকে ঢাকা ফেরার রিভিউটা লেখাই হচ্ছিলো না। অবশেষে সেই অলসতাকে জয় করে লেখতে সক্ষম হয়েছি! তাই আর কথা না বাড়িয়ে মূল রিভিউ শুরু করা যাক!
সাইড ভিউ |
ব্যাক ভিউ |
ফ্রন্ট ভিউ |
সেইন্টমার্টিন থেকে সব জাহাজই একসাথে দুপুর ৩ টার সময় ছাড়ে এবং টেকনাফ দমদমিয়া ঘাটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৬ টা বেজে যায়। জাহাজ থেকে নেমেই আমি আমাদের বাসের খোজ করতে থাকি। পরে দেখলাম বাস কাউন্টারের উল্টোপাশের মাঠের মধ্যে রাখা। পরে সব ব্যাগ নিয়ে, বক্সে তুলে দিয়ে বাসে উঠে বসি ৬:৫৪ তে। কিন্তু এরপর পাক্কা একঘন্টা সেই মাঠের মধ্যেই বসে ছিলাম ! পুরা ঘাট ব্লক। বাস কোনোভাবেই মাঠ থেকে বের হতে পারছিলো না। তো যাই হউক, ঠিক ৭:৫৩ তে বাস মাঠ থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠতে সক্ষম হয়। ৮:০৬ এ বিজিবি চেকপোস্ট ক্রস করেই মূল জার্নি শুরু করি।
কিন্তু রাস্তায় কাজ চলার কারনে রাস্তা প্রচন্ড খারাপ আর ভাঙা। এর মধ্যে কিছুক্ষণ পর পরই দেখি রাস্তার একদম মাঝখানে কেটে কাজ করতেসে। যার ফলে রাস্তার একদম সাইড দিয়ে সব যানবাহনকে ক্রস করতে হয়, এই কারনেই মূলত অনেক জ্যাম ছিলো। একরকম ঠেলতে ঠেলতে এসে হ্নীলা বাজার ক্রস করেই স্ক্যানিয়া তার এক্সিলারেশনের খেল দেখাতে থাকে এই ভাঙা রাস্তাতেও! শুরুতেই আমাদের কাছে চট্টগ্রামের লোকাল হানিফ সুপার ধরা খেয়ে যায় পিকাপের কাছে। পরে দুই এস.আলমের বাম্পার ধরেই আমরা এগোতে থাকি। ৮:৪৬ এ হোয়াইংকং বাজার পার হয়েই জ্যামে পড়ি! সেই জ্যাম ছাড়ে ৯:০৬ এ। ৯:১৬ তে উচিপ্রাং বাজার পার হয়ে ভালো রাস্তায় উঠি। কিছুদূর এগোতে না এগোতেই আবার জ্যাম শুরু হয় হোয়াইংক্ষ্যাং চেকপোস্টের কারনে। পাক্কা ৩১ মিনিট বসে থাকার পর ৯:৪৭ এ আবার যাত্রা শুরু করি। এরপর রাস্তায় আর কোথাও কোনো জ্যাম পাইনি। তবে পালংখালি এসে বাধে একটা বিপত্তি! রানিং অবস্থাতেই বাসের হাই বিম লাইটের তার কেটে যায় !
কিন্তু সেইটা দাঁড়িয়ে দেখার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। যাই হউক আমরা ওই স্বল্প আলোতেই এগোতে থাকে। অপরদিকে সুপারভাইজার রাসেল ভাই শ্যামলীর কক্স টার্মিনালের একজন মিস্ত্রীকে ফোন করে লিংক রোড এসে দাড়িয়ে থাকতে বলে। কারন কুয়াশার দিনে এরকম স্বল্প আলোতে ঢাকা যাওয়া সম্ভব নয়। এমনিতেও চিটাগং-কক্স এর রাস্তা রাতের বেলায় অনেক রিস্কি হয়ে যায়। পরে ১০:৪৯ এ আমরা লিংক রোডে প্রবেশ করি এবং একটু সামনে যেয়েই রাস্তার পাশে বাস সাইড করে লাইট ঠিক করার জন্য। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পরেও ঠিক করা সম্ভব হচ্ছিলো না কারন লাইটের রিলে কেটে গেসিলো। পরে আর উপায় না পেয়ে হাই বিমের লাইন পার্কিং লাইটের সাথে ডাইরেক্ট করে দেয়। যার ফলে আর ডিপার দেওয়া সম্ভব ছিলো না। পরে ১১:৩২ এর সময় আমরা আবারো যাত্রা শুরু করি। একটু সামনে এগিয়েই কক্স-আব্দুল্লাহপুরের স্ক্যানিয়া ২১০১ এর সাথে দেখা হয়। তারপর ওইটার সাথে সাথেই আমরা চলতে থাকি। আর আমি বসে বসে দুই স্ক্যানিয়ার একসাথে তাউরাশি দেখতে থাকি।
১২:১৯ এ চকরিয়া পার হই। তারপর দুই স্ক্যানিয়া একসাথেই যাত্রাবিরতির জন্য ফোর সিজনসে ঢুকে ১২:৪১ এ। প্রায় ৫০ মিনিটের যাত্রাবিরতি শেষে আমরা ১:৩২ এ হোটেল থেকে বের হই। খুবই স্মুথ স্পিডে ক্রুজিং করে ২:৪৪ এ আমরা কর্ণফুলী ব্রিজে উঠি। এরপর এক টানে ২:৫৮ তে দামপাড়া চলে আসি। মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যেই একে খান চলে আসি মধ্যরাতে রাস্তা ফাকা থাকার কল্যাণে৷ ৩:১৯ এ ভাটিয়ারীতে তেল নেওয়ার জন্য একটা পাম্পে প্রবেশ করি। ব্রেক থেকে বের হওয়ার পর আমি একদম ঘুমের সাগরে ডুবে যাই, কারন ৩ দিন ঘুরার পরে একদমই টায়ার্ড ছিলাম বিধায় । আমার ঘুম ভাঙ্গে চৌদ্দগ্রাম এসে। ভোর ৫:২৪ এ মায়ামি রিসোর্টে যাত্রাবিরতির জন্য প্রবেশ করি। ৫:৪৪ এ হোটেল থেকে বের হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে আবারো যাত্রা শুরু করি। ৬:২৬ এ দাউদকান্দি ব্রীজ পার হই। তারপর ৭ টায় সাইনবোর্ডে প্যাসেঞ্জার নামিয়ে ৭:৩১ এ আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডে প্রবেশ করি। এরপর মোস্তফা ভাই, রাসেল ভাইয়ের সাথে কুশল বিনিময় করে বাস থেকে নেমে যাই।
এবার আসি বাসের কন্ডিশনের কথায়। এককথায় যদি বলি তাহলে, বাইরে সদরঘাট ভেতরে ফিটফাট ! ৬ বছর বয়স হওয়ার পরেও বডির অবস্থা ভালোই ছিলো তবে বাসটাকে একটু রিপেইন্ট করা প্রয়োজন। সাথে সাথে ইন্টেরিয়রকেও একটু পরিষ্কার করা দরকার, কারন বেশ ভালোরকমের ছোট ছোট তেলাপোকার উপস্থিতি ছিলো ।
গাইড রাসেল ভাই অনেক ভাল একজন মানুষ। খুবই মিশুক প্রকৃতির এবং ব্যবহারও অনেক ভালো। সম্পূর্ণ যাত্রাতেই উনি যথেষ্ট পরিমানে হেল্পফুল ছিলেন
!
চালক মোস্তফা ভাই একদম রিসেন্টলি শ্যামলী ধরেছেন। এর আগে তিনি সোহাগে ছিলেন। ১৪-৬১৩২ গাড়িটা চালিয়েছেন উনি। এরপরে শ্যামলীতে এসেই উনি ২১০২ ধরেন। যথেষ্ট ভালো চালিয়েছেন উনি। টপ ১০৮ তুলেছেন। এছাড়া সারা রাস্তা ৯০-১০০ ধরে টেনে এসেছেন। একদম আমার মনমতো। কেউই উনার সামনে বেশিক্ষন টিকতে পারেনি!
এতোদূর এতো বিশাল একটা লেখনি পড়ে আসার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । হয়তো লেখায় অনেক ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে। আশা করি সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ এ পর্যন্তই, আল্লাহ হাফেজ! রিভিউটা কেমন লাগলো, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
বাস যাত্রী / রিভিউ লেখকের নাম : Farhan Samir , আমাকে ফলো করতে আমার নামের উপর ক্লিক করুন এবং ফেইসবুকে যেয়ে ফলো করে দিন।
রিভিউটি কালেক্ট করা হয়েছে : ফেইসবুক ভিত্তিক গ্রুপ Bus Lover থেকে।
যেকোন প্রয়োজনে আমাকে মেইল করুন - ets2ridoy@gmail.com
0 Comments